• ময়নাতদন্তের রিপোর্টে খুনের প্রমাণ মেলেনি, স্পষ্ট হচ্ছে আত্মহত্যার তত্ত্ব
    বর্তমান | ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কৃষ্ণনগরে অষ্টাদশীর রহস্যমৃত্যুতে আত্মহত্যার তত্ত্বই জোরালো হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্কুলছাত্রীর শরীরে কোনও বিকৃতি না থাকায় এবং পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ ম্যাচ না করায় তিনি যে খুন হয়েছেন, এমন কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছেন না তদন্তকারীরা। তাঁর যৌনাঙ্গে কোনও ধরনের আঘাত বা ফোর্সফুল পেনিট্রেশনের চিহ্ন মেলেনি ময়নাতদন্তে অর্থাৎ তরুণী যে ধর্ষণের শিকার হননি, সেটা এখান থেকেই স্পষ্ট।

    বৃহস্পতিবার ভোররাতে কৃষ্ণনগরে আশ্রমপাড়ায় একটি পুজো মণ্ডপের মধ্যে ওই ছাত্রীর দগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। পরিবার দাবি করে, মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। অ্যাসিড মুখে দিয়েছে অভিযুক্তরা। এর পিছনে রয়েছে তরুণীর বয়ফ্রেন্ড সহ বেশ কয়েকজন। তার ভিত্তিতে পুলিস গণধর্ষণ, অ্যাসিড হামলা, খুন সহ একাধিক ধারায় কেস রুজু করে। তরুণীর দেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। তার রিপোর্ট রবিবারই পুলিসের হাতে তুলে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাতে উল্লেখ রয়েছে, আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারণে মাথার চুল, দু’টি হাত, মুখের বেশিরভাগ অংশ ও বুক  পুড়ে গিয়েছে। শরীরের নীচের অংশ পুড়েছে।  আগুনে তাঁর পরনের প্যান্ট, চুড়িদার ও অন্তর্বাস পুরো পুড়ে গিয়েছে। পরনের কাপড় থেকে কেরোসিন তেলের গন্ধ মিলেছে। তাঁর বুকের অংশ সবচেয়ে বেশি দগ্ধ হয়েছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের প্রমাণ মিলেছে বলে উল্লেখ রয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। তাঁর শরীরের নব্বশ শতাংশ পুড়েছে। তরুণীর শরীরে গভীর আঘাতের কোনও চিহ্ন মেলেনি। এমনকী আঘাতের ফলে শরীরে কোনও বিকৃতি হয়নি। তরুণীর জেনিটাল পার্টস অক্ষতই রয়েছে। 

    তদন্তকারীদের ব্যাখ্যা রিপোর্টের এই অংশ থেকে স্পষ্ট হচ্ছে, বাইরে থেকে তাঁকে আঘাত করা হয়নি। অর্থাৎ খুনের কথা বলা হলেও তার ইঙ্গিত নেই। একইসঙ্গে তরুণীর শরীরে কোনও কালসিটের দাগ নেই। তদন্তকারীদের বক্তব্য, যদি ওই তরুণীকে কেউ পুড়িয়ে মারে, তাহলে তার আগে ধস্তাধস্তি হবে। সেক্ষেত্রে শরীরের  কালসিটে বা নখের আঁচড়ের দাগ থাকবে। এক্ষেত্রে তা না মেলায় আত্মহত্যার তত্ত্বই জোরালো হচ্ছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। ভিসেরা পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে পাকস্থলী, কিডনি ও লিভারের অংশ। তাঁর নখ, চুলের অংশ ও লালারসও সংরক্ষণ করেছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। 

    আরও একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্তকারীরা দেখেছেন প্রশাসনিক ভবন থেকে ওই ছাত্রী একাই ঘটনাস্থল অর্থাৎ পুজো মণ্ডপের দিকে যাচ্ছেন। মণ্ডপেও তাঁকে একাই ঢুকতে দেখা গিয়েছে। ওই সময় সেখানে কেউ ছিলেন না। এই সুযোগে গায়ে কেরোসিন ঢেলে তাঁর আত্মঘাতী হওয়ার সম্ভাবনাই জোরালো হয়েছে তদন্তে।   
  • Link to this news (বর্তমান)