• ভয়ঙ্কর! গাড়িতে পিষে প্রতিবাদী বধূকে হত্যা
    বর্তমান | ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: স্বামীর সামনেই মহিলাকে হেনস্তা। প্রতিবাদ করতে যেতেই বধূর উপর দিয়ে মালবাহী গাড়ি চালিয়ে মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিল অভিযুক্তরা। ঘন অন্ধকারে গাড়ির হেড লাইট বন্ধ রেখে দ্রুত গতিতে ধাক্কা মারা হয়। তাতেই মৃত্যু হয় ওই মহিলার। জখম হয়েছেন আরও দু’জন। তাঁরাও প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন। তাঁদের একজনের অবস্থা সঙ্কটজনক বলে সূত্রের খবর। শনিবার গভীর রাতে এমন ভয়ঙ্কর, হাড়হিম করা ঘটনার সাক্ষী থাকল রানাঘাট-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়ক। 

    রবিবার সকালে মহিলার স্বামী তাহেরপুর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিসও অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে তদন্ত শুরু করে। অভিযান চালিয়ে ঘাতক গাড়িটিকে বাজেয়াপ্ত করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয়েছে চালককেও। কৃষ্ণনগরে ছাত্রীর রহস্যমৃত্যুর জট এখনও কাটেনি। তার মধ্যেই এই ঘটনা জেলাজুড়ে তোলপাড় ফেলেছে। শিউরে ওঠার পাশাপাশি নিন্দায় সরব হয়েছে সব মহল। 

    জানা গিয়েছে, তাহেরপুর থানার শ্যামনগর কামগাছি এলাকার বাসিন্দা সুজন বিশ্বাস। মৃতা মহিলা তাঁরই স্ত্রী। নাম তন্দ্রা বিশ্বাস (৩২)। সুজনের একটি ওষুধের দোকান রয়েছে কোতোয়ালি থানার জালালখালিতে। প্রতিদিনের মতো রাতে দোকান বন্ধ করে বাইকে সস্ত্রীক বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। রাস্তা ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। খামার শিমুলিয়া এলাকা পার হওয়ার সময় তন্দ্রাদেবী বাইকে বসেই চশমা পরিস্কার করছিলেন। হাত ফস্কে চশমাটি পড়ে যায়। বাইক থামিয়ে সেটি খুঁজছিলেন স্বামী-স্ত্রী। সেইসময় ওই রাস্তা ধরে আসছিল একটি ইঞ্জিন ভ্যান। রাস্তর উপর বাইকটি রাখা নিয়ে চালকের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সামান্য কথা কাটাকাটি হয়। অভিযোগ, চালক তন্দ্রাদেবীকে কু-কথা, কটূক্তি এবং অশ্রাব্য গালিগালাজ করে। প্রতিবাদ করেন সুজনবাবু। দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। এরই মাঝে ইঞ্জিনভ্যানের চালক ফোন করেন কাউকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় একটি ছোট হাতি। সেই গাড়ির চালকও নেমে এসে সুজনবাবুকে মারধর করে। রেহাই পাননি তন্দ্রাদেবীও। 

    ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে সুজনবাবু বলছিলেন, ‘অন্ধকার রাস্তা। সেখানে সস্ত্রীক দাঁড়িয়ে নিরাপত্তার অভাব বোধ করি। আমিও ফোন করে জালালখালির কয়েকজন পরিচিতকে ডাকি। তাঁরাও কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসেন। দুই চালকের সঙ্গে আমাদের ফের বচসা বাধে। এর মধ্যেই ছোট হাতিটি নিয়ে চালক রানাঘাটের দিকে রওনা দেয়। আমরা ভেবেছিলাম সমস্যা মিটে গিয়েছে। কয়েক মিনিট পরেই দেখা যায়, ফের ওই ছোট হাতি সামনের হেডলাইট নিভিয়ে কৃষ্ণনগরের দিকে দুরন্ত গতিতে ছুটে আসছে। সেই সময় বেশ কয়েকজন স্থানীয় মানুষও ছিলেন ঘটনাস্থলে। কয়েকটি বাইক রাখা ছিল। গাড়িটি আনাড়িভাবে ভিড় লক্ষ্য করে এগিয়ে আসে। আমার স্ত্রী সহ আরও দু’জনকে ধাক্কা মারে। রাস্তায় ছিটকে পড়ে। তাঁকে পিষে দেয় গাড়িটি। পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে।’

    এদিকে, কাণ্ডটি ঘটিয়ে গাড়ি ফেলে রেখে চম্পট দেয় চালক। স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় তন্দ্রাদেবী সহ জখম ওই দু’জনকে উদ্ধার করে নিয়ে যান শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। চিকিৎসকরা গৃহবধূকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আহতদের মধ্যে একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। দীপ পাল নামে অন্য আহত চিকিৎসাধীন। পুলিস জানিয়েছে, ছোট হাতির চালক বিপুল মুস্তাফিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। 

    সুজন এবং তন্দ্রার ৯ বছরের পুত্রসন্তান রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার পর অনেক কষ্ট করে জালালখালিতে একটি ওষুধের দোকান খুলেছিলেন সুজন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলেই সেই দোকান চালাতেন। রোজ রাতে একসঙ্গে বাড়ি ফিরতেন রাজ্য সড়ক ধরে। কিন্তু সামান্য ঘটনাকে ঘিরে এমন একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যাবে, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি সুজনবাবু। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘মানুষ এত নৃশংস, নির্মম হতে পারে! অভিযুক্ত চালকের কঠোর শাস্তি চাই।’ রবিবার মহিলার দেহ ময়নাতদন্তের পর তুলে দেওয়া হয় সুজনবাবুর হাতে।
  • Link to this news (বর্তমান)