• বাংলাদেশ থেকে জিরো পয়েন্টে এসে বাবাকে শেষ বিদায়,  ভারতের গ্রামে মৃত্যু বৃদ্ধের, বিএসএফের মানবিক সৌজন্যে ইচ্ছেপূরণ
    বর্তমান | ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: বিস্তীর্ণ সবুজ ধানখেত, ইমিগ্রেশন লাইন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত। তার একদিকে পাঁচবেড়িয়া গ্রাম। অন্যদিকে কদমতলা। এই দুই গ্রামের মাঝখানে জিরো পয়েন্ট। দু’পাশে ২৪ ঘণ্টা বিএসএফ ও বিজিবি’র (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) টহলদারি। সেই জিরো পয়েন্টেই শনিবার কান্নার রোল। সীমান্ত ভাগ করা ‘৪০/২৫’ সিমেন্টের পিলারের সামনে রাখা এক ব্যক্তির মৃতদেহ। দেহ ঘিরে কাঁদছেন মৃতের কন্যারা। তাঁরা বাংলাদেশ থেকে জিরো পয়েন্টে এসেছেন বাবাকে শেষ বিদায় জানাতে। পাসপোর্ট, ভিসা নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে আসেননি। এসেছেন কাদা-জল পেরিয়ে হেঁটে। বিএসএফ তাঁদের আসতে সাহায্য করেছে। শেষবিদায় জানানোর সুযোগ করে দিয়েছে। বাবাকে শেষবার দেখার জন্য মেয়েদের ইচ্ছেপূরণ তাদের জন্যই ঘটেছে। তাই বাংলাদেশে ফেরার সময় সজল চোখে জওয়ানদের ধন্যবাদ জানিয়ে গেলেন মৃতের মেয়েরা। এমন এক মানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার পাঁচবেড়িয়া সীমান্ত।

    বিএসএফ জানিয়েছে, মৃতের নাম খোদেজান মণ্ডল। ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম পাঁচবেড়িয়ায় তাঁর বাড়ি। ওই গ্রামের ওপারেই বাংলাদেশের কদমতলা। সেখানে বসবাস তাঁর মেয়েদের। পাঁচবেড়িয়ায় রয়েছে বিএসএফের ১০৭ ব্যাটেলিয়ানের বর্ডার আউট পোস্ট (বিওপি)। শনিবার সেখানে হঠাৎ হাজির হন একদল গ্রামবাসী। এসে তাঁরা জানান, বিওপি’র কোম্পানি কমান্ডারের সঙ্গে দেখা করতে চান। দেখা করেন কোম্পানি কমান্ডার। ‘কী হয়েছে?’ তাঁর প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই গ্রামবাসীরা জানান, তাঁরা খোদেজান মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির আত্মীয়। খোদেজান মারা গিয়েছেন। কিন্তু দেহ সৎকার করা যাচ্ছে না। ‘কেন?’ কমান্ডারের প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা বলেন, ‘বাংলাদেশের গ্রামে থাকেন খোদেজানের মেয়েরা। তাঁরা শেষবারের জন্য বাবাকে দেখতে চান। দয়া করে ব্যবস্থা করে দিন’। কোম্পানি কমান্ডার তাঁদের আশ্বস্ত করেন। তারপর উদ্যোগ নিয়ে শুরু করেন প্রশাসনিক প্রস্তুতি। যেহেতু তাঁরা বাংলাদেশের গ্রাম থেকে আসবেন, তাই বিজিবি’র সঙ্গে কথা বলেন প্রথমে। তারপর দুই দেশের দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আলোচনা হয়। বাবাকে শেষ দেখার ইচ্ছে মঞ্জুর করে দুই বাহিনীই। বিএসএফের পক্ষ থেকে মৃতদেহ গ্রাম থেকে নিয়ে যাওয়া হয় সীমান্তের জিরো পয়েন্ট লাইনে। অন্যদিকে বিজিবি মৃতের মেয়েদের নিয়ে আসেন পয়েন্টে। মেয়েদের সঙ্গে ছিলেন তাঁদের কয়েকজন আত্মীয়ও।

    এরপর চিরঘুমে চলে যাওয়া বাবাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মেয়েরা। দু’পাশে তখন স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে পাহারায় বিএসএফ এবং বিজিবির জওয়ানরা। জিরো পয়েন্টের এই দৃশ্য দূর থেকে দেখার জন্য দু’দেশের গ্রামে দাঁড়িয়ে বহু মানুষ। তাঁরা অবশ্য জিরো পয়েন্টে আসার সুযোগ পাননি। দূর থেকেই ক্যামেরাবন্দি করেন মুহূর্তটিকে। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের জনসংযোগ আধিকারিক তথা ডিআইজি এন কে পান্ডে বলেন, ‘জওয়ানরা শুধু দিনরাত সীমান্ত পাহারাই দেন না, আন্তর্জাতিক সীমান্তে বসবাসকারী মানুষের মানবিক ও সামাজিক প্রয়োজন মেটাতেও প্রস্তুত থাকেন।’ শনিবারের ঘটনা তারই এক অনন্য উদাহরণ।
  • Link to this news (বর্তমান)