ধর্ষণের অভিযোগ করতেই সিনেমার কায়দায় নির্যাতিতা শ্যালিকাকে পর পর গুলি! বরাতজোরে প্রাণরক্ষা
প্রতিদিন | ২১ অক্টোবর ২০২৪
অর্ণব আইচ: দূর সম্পর্কের শ্যালিকাকে ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ! চলছিল ব্ল্যাকমেলও। শেষ পর্যন্ত জামাইবাবুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা। তারই শোধ তুলতে রাতে মহিলার বাড়িতে মদ্যপ অবস্থায় চড়াও অভিযুক্ত। সিনেমার কায়দায় পকেট থেকে পিস্তল বের করে মহিলাকে লক্ষ্য করে চালায় গুলি! লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় কোনওমতে বেঁচে যান মহিলা। ঝন্টু ঘোষ নামে ওই অভিযুক্ত পালিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যায় দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুর থানার পুলিশের হাতে। তার কাছ থেকে একটি পিস্তল ও গুলিভর্তি ম্যাগাজিন পুলিশ উদ্ধার করেছে। কোথা থেকে সে এই মুঙ্গেরি পিস্তল জোগাড় করল, সেই ব্যাপারে চলছে পুলিশের তদন্ত।
পুলিশ জানিয়েছে, হরিদেবপুরের কবরডাঙায় ঝন্টু ঘোষের বাড়ি। ওই এলাকায়ই তার লুচি, পরোটা ও খাবারের দোকান। বছর চারেক আগে কবরডাঙার বাসিন্দা এক মহিলার সঙ্গে ঝন্টুর পরিচয় হয়। সম্পর্কে মহিলা ঝন্টুর দূর সম্পর্কের শ্যালিকা। ওই সময়ই বিভিন্ন অছিলায় সে মহিলাকে নিজের বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। এর পর থেকে ঝন্টু ওই মহিলাকে ক্রমাগত ভয় দেখাতে থাকে। তাঁর পরিবারের লোকেদের জানিয়ে দেবে বলেও ব্ল্যাকমেল করতে থাকে। এর পর কখনও বাড়ি, আবার কখনও বা দোকানের ভিতরও ওই মহিলাকে ডেকে সে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। সে বিভিন্ন সময় মহিলার অশ্লীল ছবি ও ভিডিও তুলে ক্রমাগত ব্ল্যাকমেল করতে থাকে।
মহিলার অভিযোগ, তিনি ওই ব্যক্তির সঙ্গে কলকাতার বাইরে একাধিক জায়গায় হোটেলে থাকতে বাধ্য হন। এর মধ্যেই ঝন্টুর স্ত্রী বিষয়টি জানতে পারে। দম্পতির মধ্যে গোলমাল হয়। তারই জেরে ঝন্টুকে ছেড়ে তার স্ত্রী বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। যদিও ওই মহিলা তাঁর স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকেদের কিছু জানাননি। এদিনে নির্যাতিতা কিছুদিন আগে থেকেই ঝন্টুকে এড়িয়ে চলতে থাকেন। তখনই অভিযুক্ত তাঁকে ব্ল্যাকমেল করতে থাকে বলে অভিযোগ। তাঁর অশ্লীল ছবি ও ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। শেষ পর্যন্ত সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে শনিবার সকালে তিনি হরিদেবপুর থানায় যান। ঝন্টুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি ঝন্টু জানতে পারে। শনিবার রাতে প্রচণ্ড মদ্যপান করে সে মহিলার বাড়িতে যায়। সরাসরি তাঁর ঘরে চলে যায় সে। চোখের সামনে ঝন্টুকে দেখে চমকে ওঠেন মহিলা। ঘরের ভিতরই বাদানুবাদ হয়।
তার পরই সিনেমার কায়দায় পকেট থেকে ‘মুঙ্গের মেড’ সেভেন এমএম পিস্তল বের করে মহিলাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। যদিও পকেট থেকে পিস্তল বের করতে দেখে আঁতকে উঠলেও মহিলা সতর্ক হয়ে যান। প্রাণে বাঁচতে ঘরের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। তাই ঝন্টু মহিলার দিকে পর পর দু’টি গুলি চালালেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দেওয়ালে গুলি লাগে। মহিলা চিৎকার করে ওঠেন। চিৎকার ও দু’টি গুলির শব্দ শুনে প্রতিবেশীরা দৌড়ে আসেন। তাঁরা তাঁকে ধরতে গেলে ঝন্টু পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় হরিদেবপুর থানার পুলিশ আধিকারিকরা। কবরডাঙা থেকেই পুলিশ ঝন্টুকে গ্রেপ্তার করে। তাকে জেরা করে আরও তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।