এই সময়: শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বাধীন প্রদেশ কংগ্রেসের দিক থেকে রবিবার পর্যন্ত জোট নিয়ে কোনও সদর্থক বার্তা আসেনি। এই পরিস্থিতিতে জোটে ইতি টেনে আজ, সোমবারই রাজ্যের ছ’টি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিতে পারে বামফ্রন্ট। এই ছ’টি আসনের মধ্যে সিতাই কেন্দ্রে ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দেবে, মাদারিহাটে প্রার্থী দেবে আরএসপি, মেদিনীপুর বিধানসভায় প্রার্থী দেবে সিপিআই।বামফ্রন্টের এই তিন শরিকের পাশাপাশি হাড়োয়া কেন্দ্র নিয়ে নওশাদ সিদ্দিকির আইএসএফ-র সঙ্গে কথা চালিয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সমঝোতা সূত্র বের করার চেষ্টা চলছে। একই ভাবে নৈহাটি কেন্দ্রে প্রথমে সিপিএম আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ইস্যুতে আন্দোলনে থাকা নাগরিক সমাজের একজনকে প্রার্থী করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু নৈহাটির যে ব্যক্তিকে প্রার্থী করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছিল, তা ফলপ্রসূ না হওয়ার ইঙ্গিত পেয়ে বিকল্প ভাবনা শুরু করেছে সিপিএম।
নৈহাটি আসনটি সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-কে ছেড়ে দেওয়া নিয়েও আলিমুদ্দিন স্ট্রিট ভাবনাচিন্তা করেছে। এই পরিস্থিতিতে বাঁকুড়ার তালড্যাংরা আসনে সিপিএম তাদের প্রার্থী ঠিক করে রেখেছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘যে আসনগুলি নিয়ে অন্য দলগুলির সঙ্গে আলোচনা চলছে, তা সোমবারের মধ্যে সেরে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিকেলে বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সোমবার ছ’টি কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়া হতে পারে।’
নৈহাটি ও হাড়োয়া নিয়ে সিপিআইএমএল (লিবারেশন) এবং আইএসএফের সঙ্গে যদি আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সমঝোতা হয়, তা হলে ছ’টি বিধানসভার মধ্যে শুধু তালড্যাংরাতে সিপিএমের প্রার্থী থাকবে। এই পরিস্থিতিতে প্রদেশ কংগ্রেস কী করছে? বিধানভবন সূত্রের খবর, ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রর প্রতিটি থেকেই একাধিক নামের প্রস্তাব প্রদেশ নেতৃত্বের কাছে এসেছে। সেই নামের তালিকা এআইসিসি-র কাছে সোমবার পাঠানো হতে পারে। এই নামের তালিকা থেকেই ছয় কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে কংগ্রেস।
বিধানভবনের এই মনোভাব সম্পর্কে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘রাজ্যে তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট করা আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। কংগ্রেস কী করবে তা তাঁদের ঠিক করতে হবে।’ আলিমুদ্দিন স্ট্রিট আজ ছ’টি কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণা করে দিলে অধীর চৌধুরীর জমানা থেকে যে বাম-কংগ্রেস জোট চলছিল, তা ভেঙে যাবে।
বিধান ভবনের অবস্থান নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের বক্তব্য, ‘একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা ঘোষিত হয়। সেই প্রক্রিয়া চলছে। পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। প্রদেশ কংগ্রেস দ্রুত প্রার্থী নিয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে।’
এ দিকে এ দিনই বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আবার হিন্দু ভোট ভাগ হওয়া আটকাতে সিপিএমকে আটকানোর পরামর্শ দেন দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে। হলদিয়ার সুতাহাটাতে অনুষ্ঠিত বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার বিজয়া সম্মিলনীতে ভাষণ দিতে গিয়ে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে এমন পরামর্শ দেন।
এ দিন তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, ‘সিপিএম হিন্দু ভোট কাটার কারণে এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১২টি আসনে হেরেছে।’ পাল্টা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘বিজেপি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। তাই সিপিএমের ভোট ভাঙনোর কথা বলছে।’