আরজি কর নিয়ে আন্দোলনে কি কিছুটা শক্তি বাড়ল বামেদের? আগামী মাসে রাজ্যের ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের আগে সেটাই মস্ত মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে বঙ্গ-বিজেপির। উপনির্বাচনে তৃণমূলকে টেক্কা দেওয়ার কথা ভাবছে না পদ্ম-ব্রিগেডে। উপনির্বাচনের প্রস্তুতি বৈঠকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোভাবেই তা স্পষ্ট হয়েছে। তাঁরা মূলত ছয় বিধানসভা আসনে ভোট শতাংশ বাড়ানোয় জোর দিচ্ছেন। কিন্তু সেই লক্ষ্যও পূরণ হবে কিনা, সে নিয়ে পদ্ম-শিবিরের আশঙ্কার মূলে বামেরাই।উপনির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন জেলা থেকে যে সাংগঠনিক রিপোর্ট রাজ্য বিজেপি দপ্তরে এসে পৌঁছেছে, সেখানে গত লোকসভা ভোটের নিরিখে বামেদের শক্তিবৃদ্ধিরই ইঙ্গিত মিলেছে। আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় দু’মাসের বেশি তপ্ত বঙ্গ-রাজনীতি। বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি পথে নেমেছে নাগরিক সমাজ।
গত দু’মাসে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপিও একাধিক আন্দোলন কর্মসূচি নিয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের নিরিখে সিপিএম যে তাঁদের থেকে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে আছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি গেরুয়া নেতৃত্বের। মূলত কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় আরজি কর আন্দোলন সীমাবদ্ধ থাকলেও সামগ্রিক ভাবে তার আঁচ রাজ্যজুড়ে কমবেশি পড়েছে বলেই বঙ্গ-বিজেপির নেতাদের ধারণা।
এক বর্ষীয়ান বিজেপি নেতার কথায়, ‘আগামী মাসেই ছয় বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাঁরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক আরজি কর আন্দোলনের কারণে বামেদের ভোট কিছুটা বাড়তে পারে। আর সেটা হলে সিপিএম আমাদের ভোটই কাটবে। ফলে আমরা যে ভোট শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছি, তাও ধাক্কা খাবে।’
রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, হিসেব কষেই সম্প্রতি বিজেপি নেতারা সিপিএমের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছেন। শুক্রবারও সিঙ্গুরে সভা করতে গিয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বামেদের বিঁধেছেন। সিপিএম তাঁদের ভোট কেটে তৃণমূলকে সুবিধা করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে বলেও সরব হয়েছেন শুভেন্দু। তবে রাজ্য বিজেপির এক পদাধিকারীর দাবি, ‘আরজি কর আন্দোলনে বামেদের অংশগ্রহণ বেশি। নাগরিক প্রতিবাদ কর্মসূচিগুলিতে সিপিএম কর্মীরা জাতীয় পতাকা নিয়েও ভিড় করছেন। সে দিক থেকে মনে হচ্ছে বামেদের কিছুটা শক্তি বেড়েছে। কিন্তু ভোট-বাক্সে তার প্রভাব পড়বে না।’
তবে আরজি করের ঘটনার তদন্তে সিবিআইয়ের ভূমিকার সমালোচনা করে সিপিএম আরও জোরালো ভাবে তৃণমূল-বিজেপি সেটিংয়ের তত্ত্বও তুলতে শুরু করেছে। বাম নেতৃত্বের ধারণা, আরজি করের ঘটনার প্রভাব উপনির্বাচনে পড়বেই। তৃণমূল অবশ্য বিরোধীদের কোনও যুক্তিই মানতে চাইছে না। ইতিমধ্যেই দলের অন্যতম নেতা কুণাল ঘোষ দাবি করেছেন, উপনির্বাচনে ছ’টি আসনেই জিতবেন তাঁরা।