• সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা সেরা বাংলায়, স্বীকৃতি কেন্দ্রের রিপোর্টে
    এই সময় | ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • এই সময়: সুন্দরবনের মহিলা পরিচালিত ‘সুন্দরিণী’ সদ্য জগৎসভায় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা অর্জন করেছে প্যারিসে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ডেয়ারি ফেডারেশনের সম্মেলনে। ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই বাংলা মুকুটে ফের যোগ হলো একটি নতুন পালক। সমবায়ের পর এ বার সাফল্য স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে। সরকারি হাসপাতালের গুণগত মানের বিচারে দেশে শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে বাংলা।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই বলেন, বাংলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ মানের। আরজি কর ইস্যুতে অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে শনিবার ফোনে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়েও তিনি আন্দোলনকারীদের অনশন প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার বার্তা দিতে গিয়ে বলেন, ‘হেল্থ কোয়ালিটির দিক থেকে আমরা দেশে নাম্বার ওয়ান।’ তার পরদিনই বাংলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নিয়ে এল জাতীয় স্বীকৃতি।

    রাজ্যের বিরোধী শিবির কিংবা আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা যতই সমালোচনা করুন রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মান নিয়ে, বাস্তবে দেখা গেল, কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টে প্রকাশিত রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যে সব পরিষেবা দেওয়া হয়, তেমন মোট ১২,৮৫৯টি পরিষেবার মধ্যে ৩০৩৯টিই কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিয়োরেন্স সার্টিফিকেট পেয়েছে। সেই রিপোর্টে স্পষ্ট, ন্যাশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিয়োরেন্স স্ট্যান্ডার্ডস (এনকিউএএস) মোতাবেক, দেশের মধ্যে বাংলাতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানোত্তীর্ণ স্বাস্থ্য পরিষেবা মেলে। তাই মধ্যপ্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশকে টপকে সারা দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।

    স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের নিরিখে ভালো পারফরম্যান্স বিচার করতে রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি প্রতিযোগিতামূলক কর্মসূচি শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য কল্যাণ মন্ত্রক। সেই মতো, এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন পরিষেবার গুণমান কেমন, তা বিচার করার জন্য কয়েক মাস আগে ভিন রাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞরা এসেছিলেন বাংলায়। বিভিন্ন মাপকাঠির উপর খতিয়ে দেখা হয়, একেবারে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে গ্রামীণ, মহকুমা ও জেলা স্তরের হাসপাতালগুলির পরিস্থিতি। এই মাপকাঠিগুলির মধ্যে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা, সেখানে কী ধরনের পরিষেবা পাওয়া যায়, হাসপাতাল থেকে রোগীর শরীরে সংক্রমণ ছড়ানোর হার, প্রসূতি মৃত্যুর হার, সিজ়েরিয়ান ও নর্ম্যাল ডেলিভারির হার— এই রকম অনেকগুলি মানদণ্ড রয়েছে।

    সেই সব আন্তর্জাতিক স্তরের মাপকাঠির অনেকগুলিতেই সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলার হাসপাতালগুলির প্রায় তিন হাজারের বেশি পরিষেবা। সেই মানের বিচারে সার্টিফিকেটও পেয়েছে তারা। রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা সব রকম স্বাস্থ্য সূচকেই দেশের মধ্যে ভালো জায়গায় রয়েছি। আর এনকিউএএস কর্মসূচিতে তো একেবারে সেরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করে চলেছি আমরা।’ তাঁর কটাক্ষ, ‘যে বিরোধীরা মুখে সব সময়ে এ রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমালোচনা করেন, তাঁরা মুখে না হোক, মনে মনে অন্তত এবার বাংলার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের প্রশংসা করুন!’

    শুক্রবার এই রিপোর্টটি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত হলেও রবিবার তা সামনে এসেছে। তালিকা অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালে পরিষেবার মান কেমন, সেই বিচারে তাবড় রাজ্যকে পিছনে ফেলে দেশের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে বাংলা। এই বিচারে বাংলার পরেই রয়েছে দক্ষিণের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ। ওই রাজ্যে এনকিউএএস স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পরিষেবার সংখ্যা ২,১৭২টি। এর পরের স্থান পেয়েছে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে। সেই রাজ্যে এনকিউএএস স্বীকৃত পরিষেবার সংখ্যা ১,৯৫২টি। অধিকাংশ বিজেপি শাসিত রাজ্যের মতো গুজরাট ও উত্তরপ্রদেশের স্থান অনেক পরে। এর আগেও বহু সমালোচনাকে হেলায় উড়িয়ে বাংলার ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প দেশের প্রায় সব রাজ্যের অনুকরণীয় বলে প্রমাণিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও স্বীকৃতি পেয়েছে। এ বার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও এল বন্দিত স্বীকৃতি।
  • Link to this news (এই সময়)