• দেহ উদ্ধারের দিন সেমিনার হলে ‘আন্দোলনকারী’দের কয়েকজন, সিবিআইয়ের হাতে ভিডিও
    প্রতিদিন | ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • অর্ণব আইচ: আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় পুলিশ যাওয়ার আগেই কি তথ‌্য ও প্রমাণ লোপাট করেছিলেন ১৫ জন ডাক্তারি পড়ুয়া? এক পুলিশ অফিসারের তোলা একটি ভিডিও ও একটি জেনারেল ডায়েরির ভিত্তিতে উঠেছে এমনই প্রশ্ন। ওই ভিডিও ও জেনারেল ডায়েরির পাতা এখন সিবিআইয়ের হাতে। ওই ডাক্তারি পড়ুয়াদের মধ্যে একটি অংশ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, এমন তথ‌্যও এসেছে সিবিআইয়ের হাতে। ওই ডাক্তারি পড়ুয়ারাও এখন সিবিআইয়ের স্ক‌্যানারে।

    তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে ইতিমধ্যে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে খবর। যেখানে আন্দোলনে থাকা ডাক্তারি পড়ুয়ারাই ঘটনাস্থল থেকে তথ‌্য ও প্রমাণ লোপাট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, সেখানে পুলিশ পৌঁছনোর আগে ঘটনাস্থলে ‘আন্দোলনকারী’দের একাংশের উপস্থিতি এবং ইচ্ছামতো ঘোরাঘুরি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। ঘটনাস্থল থেকে তথ‌্য ও প্রমাণ লোপাটের জন‌্য ওই ডাক্তারি পড়ুয়াদের কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, সেই বিষয়টিও সিবিআই খতিয়ে দেখছে।

    সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, গত ৯ আগস্ট সকাল সাড়ে নটা নাগাদ আর জি কর হাসপাতালের চারতলায় সেমিনার হলে মহিলা চিকিৎসকের দেহ দেখতে পান এক ডাক্তারি পড়ুয়া। তাঁর কাছ থেকেই খবর পেয়ে আরও কয়েকজন চিকিৎসক ও ডাক্তারি পড়ুয়া ঘটনাস্থলে যান। তখনই খবর যায় আর জি করের পুলিশ ফাঁড়িতে। খবর পেয়েই এক অ‌্যাসিস্ট‌্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার আধিকারিক চারতলায় ঘটনাস্থলে পৌঁছন। কিন্তু তিনি দেখেন যে, ততক্ষণে প্রায় ১৫ জন ডাক্তারি পড়ুয়া ঘটনাস্থলে রয়েছেন। তাঁরা ঘিরে রয়েছেন নির্যাতিতার দেহ। ওই পুলিশ আধিকারিক নিজের মোবাইল ফোন বের করে তার ভিডিও তোলেন। ওই ভিডিও ফুটেজ সিবিআইয়ের হাতে এসেছে।

    ওই ফুটেজে সিবিআই আধিকারিকরা দেখেছেন যে, সেমিনার হলের এক প্রান্তে থাকা স্টেজের উপর পড়ে রয়েছে নির্যাতিতার দেহ। প্রায় ১৫ জন নিজেদের ইচ্ছামতো ওই স্টেজের উপর ও তার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কয়েকজন ঘোরাঘুরি করছেন নির্যাতিতার দেহের কাছে। ইচ্ছামতো ছবি ও ভিডিও তুলছেন। ওই পুলিশ অফিসারকে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করেছিল সিবিআই। তিনি নিজের মোবাইলে তোলা ভিডিও ফুটেজ সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেন। তিনি সিবিআইকে জানান যে, এতজন একসঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার ফলে একাধিক ব‌্যক্তির হাত ও পায়ের ছাপের মধ্যে থেকে যে আসল অভিযুক্তর আঙুল ও পায়ের ছাপ নষ্ট হয়ে যাবে, তা একজন পুলিশ অফিসার হিসাবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। এ ছাড়াও এতজন ব‌্যক্তি একসঙ্গে থাকার ফলে তথ‌্য ও প্রমাণ লোপাটেরও সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তখনও থানা খবর না পাওয়ার ফলে তাঁর একার পক্ষে সম্ভব ছিল না ওই ডাক্তারি পড়ুয়াদের বারণ করার। তাই তিনি বিষয়টির ভিডিও তুলে নেন।

    এছাড়াও পুরো ব‌্যাপারটি তিনি আর জি কর হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে জেনারেল ডায়েরিতে নথিভুক্ত করে। ওই জিডি-র পাতাও সিবিআই উদ্ধার করে। ওই ফুটেজটি দেখা ও জিডি-র পাতা পড়ার পর সিবিআই আধিকারিকদের অভিমত, যাঁরা সকাল সাড়ে ন’টা থেকে প্রায় সওয়া দশটা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ঘটনাস্থলে ঘোরাঘুরি করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই চিকিৎসক ও ডাক্তারি পড়ুয়া তথা নির্যাতিতার সতীর্থ। তাঁদের মধ্যে একটি অংশ জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনেও যোগ দিয়েছেন, এমনও তথ‌্য এসেছে সিবিআইয়ের হাতে। আর জি করে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তথ‌্য ও প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে আন্দোলনকারীদের ওই একাংশের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।
  • Link to this news (প্রতিদিন)