• প্রেমের ছাড়পত্র চেয়ে কিশোরীর হিংস্র আচরণ, পুলিশের দ্বারস্থ মা
    এই সময় | ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • এই সময়, আলিপুরদুয়ার: ‘আমি এখন নবম শ্রেণি, আমি এখন শাড়ি’, ফলে চাই প্রেমের ছাড়পত্র! একমাত্র মেয়ের বায়নাক্কা মেনে না নেওয়ায় ব্লেডে ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছে মাকে। সম্প্রতি বোতল ভেঙে পেটে ঢুকিয়ে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টাও করে নাছোড় কিশোরী। শেষে উপায় না পেয়ে সোজা পুলিশের দ্বারস্থ হন অসহায় মা। পুলিশ কিশোরীকে উদ্ধার করে সিডব্লিউসির হাতে তুলে দিয়েছে। নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর কাণ্ডকারখানায় অবাক পুলিশ আধিকারিক থেকে সিডব্লিউসির কর্তারা। ঘটনা আলিপুরদুয়ারের কামাখ্যাগুড়ি পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার।

    মাসদুয়েক ধরে প্রতিবেশী যুবকের সঙ্গে মেয়ের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে দেখে কিশোরীকে বকাঝকা করেছিলেন মা। চেষ্টা করেছিলেন বোঝানোরও, যাতে এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে পড়াশোনায় মন দেয় সে। কিন্তু তাতে উল্টো ফল হয়। প্রেমে বাধা পেয়ে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করতে শুরু করে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী।বাবা-মা ভেবেছিলেন সময়ের সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জেদের মাত্রাও বাড়তে থাকে কিশোরীর। ব্লেডের আঁচড়ে নিজের মাকেই ক্ষতবিক্ষত করে সে। পুজো শেষে বায়নাক্কা মাত্রা ছাড়ায়। সোমবার কাচের বোতল ভেঙে মেয়ে নিজেকে আহত করতেই সটান পুলিশের কাছে হাজির হন মা। বিস্তারিত জানিয়ে নালিশ ঠোকেন। সব জানার পর পুলিশ আধিকারিকরা তড়িঘড়ি বাড়ি গিয়ে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে সিডব্লিউসির হাতে তুলে দেন।

    ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশী বলেন, ‘অবাক হওয়ার মতো ঘটনা। মা এসে মেয়ের কথা জানাতেই আমরা ছাত্রীটিকে উদ্ধার করে সিডব্লিউসির হাতে কাউন্সেলিংয়ের জন্য তুলে দিয়েছি।’

    জেলা সিডব্লিউসির চেয়ারম্যান অসীম বোস অবশ্য সব কিছুর জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে কাঠগড়ায় তুলছেন। তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত প্রভাব পড়ছে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের উপরে। ওই কিশোরীর বিস্তারিত কাউন্সেলিং শুরু করা হয়েছে।’

    আলিপুরদুয়ারের সমাজকর্মী রাতুল বিশ্বাস বলেন 'এটা সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের চূড়ান্ত উদাহরণ বলেই মনে করি। পড়ুয়াদের গণকাউন্সেলিং দরকার।’ এলাকার এক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, ‘শুনে আশ্চর্য হয়েছি। আমাদের সন্তানপালনের ভাবনায় অনেক পরিবর্তন আনতে হবে।’

    মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী কস্তুরী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় অবশ্য উঠে এল অন্য প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘এই বয়সী একটা মেয়ের কারও প্রতি ভালো লাগা তৈরি হতেই পারে। বয়সোচিত একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে মেয়েটি। এক্ষেত্রে তার মনে হচ্ছে, তার পছন্দের মানুষটিকে পাওয়ার পথে বাধা হচ্ছেন মা। সেই বাধা দূর করতে সে এমন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। মা হয়তো অভিভাবক হিসেবে বকেছেন। ছেলেটির সঙ্গে মেলামেশায় আপত্তির পিছনে তাঁর কোনও যুক্তিও থাকতে পারে। কিন্তু সেই যুক্তি মেয়ের কাছে পরিষ্কার নয়। মেয়ে যখন মায়ের উপরে আঘাত করল, তখন কি মা একবারও কাউন্সেলিংয়ের কথা ভেবেছিলেন? আমার মনে হয়, শুধু মেয়েটির নয়, পুরো পরিবারেরই পেশাদারের সাহায্য নেওয়া উচিত। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতার যে অভাব রয়েছে, সেটা আরও একবার প্রমাণিত হলো এই ঘটনায়।’
  • Link to this news (এই সময়)