• ‘হাতে’র সঙ্গে কথায় দেরি, বঙ্গে বাম-নকশাল সমঝোতা
    এই সময় | ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • এই সময়: কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে ইতি টানার ইঙ্গিত দিয়ে বাংলায় এই প্রথম স্ট্রিট নকশালপন্থী সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করল আলিমুদ্দিন। আসন্ন ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রটি লিবারেশনকে ছেড়ে দিয়েছে সিপিএম।নৈহাটিতে লিবারেশনের প্রার্থী হচ্ছেন দেবজ্যোতি মজুমদার। প্রায় অর্ধ-শতক আগে সিপিএম থেকে চারু মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নকশালপন্থীরা বেরিয়ে গিয়ে পৃথক সিপিআইএমএল তৈরি করেছিল। গত ৫৫ বছরে বহু ঘটনাপ্রবাহের পর চারু মজুমদারের পুত্র অভিজিৎ মজুমদার যখন লিবারেশনের বর্তমান রাজ্য সম্পাদক, সেই সময়ে সিপিএমের সঙ্গে লিবারেশনের বাংলায় প্রথম সমঝোতা হলো।

    বামফ্রন্ট সোমবার পাঁচটি কেন্দ্রের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। হাড়োয়া বিধানসভা নিয়ে নওশাদ সিদ্দিকির আইএসএফের সঙ্গে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এখনও কথা চালাচ্ছে। সেই কারণে হাড়োয়া কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম এ দিন ঘোষণা করা হয়নি।

    যদিও শেষ মুহূর্তে শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বাধীন বিধানভবন এই উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেস সমঝোতা নিয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছিল। বিধানভবন থেকে কোচবিহারের সিতাই কেন্দ্রটি চাওয়া হয় বলে বামফ্রন্ট সূত্রের খবর। কিন্তু সিতাই কেন্দ্র কোনও ভাবে ছাড়তে নারাজ বাম শরিক ফরোয়ার্ড ব্লক। ফলে আসন্ন উপনির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সমঝোতার সম্ভবনা কম।

    সিতাই কেন্দ্রের ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী হচ্ছেন অরুণ কুমার বর্মণ, মাদারিহাট কেন্দ্রে আরএসপি-র প্রার্থী হচ্ছেন পদম ওঁরাও, মেদিনীপুর কেন্দ্রে সিপিআই-র প্রার্থী মণিকুন্তল খামরুই, তালড্যাংরা কেন্দ্রে প্রার্থী সিপিএমের দেবকান্তি মহান্তি। বামফ্রন্টের প্রেস বার্তায় বলা হয়েছে, হাড়োয়া কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম দ্রুত ঘোষণা করা হবে। প্রতিবেশী বিহারে ২০১৯ এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে লিবারেশনের সঙ্গে সিপিএমের সমঝোতা হয়েছে।

    বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে একাধিক বার সিপিএম, সিপিআই-র সঙ্গে লিবারেশনের সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে দু’বার সমঝোতার চেষ্টা করেও তা হয়নি। সিপিআইএমএল (লিবারেশন) এর প্রবীণ নেতা পার্থ ঘোষের কথায়, ‘পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম সিপিএমের সঙ্গে আমাদের নির্বাচনী সমঝোতা হচ্ছে। ২০১৯ সালে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে এই সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্ত তা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।’

    সিপিএম-লিবারেশন সমঝোতা নিয়ে রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘আমরা বলেছিলাম, আরজি কর নিয়ে বাম-অতিবাম-নকশাল আঁতাঁত হয়েছে। সেটাই এখন প্রমাণিত হলো।’ তৃণমূলের এই অভিযোগ নিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শমীক লাহিড়ী বলেন, ‘চিকিৎসক ও নাগরিক সমাজ বুঝতে পেরেছেন, এই থ্রেট-কালচার, ধর্ষণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই বাম পরিসরেই সম্ভব। তাই যে নির্বাচনী জোট হয়েছে, তা মানুষের জোট।’

    বিধানভবন উপনির্বাচন নিয়ে বামেদের সঙ্গে কথা বলতে অনেক বিলম্ব করার কারণেই হাত-হাতুড়ি সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে বলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বক্তব্য। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘আমাদের আলোচনার দরজা সব সময়ে খোলা রয়েছে। এ দিন একটু কথা (সিপিএম-কংগ্রেস) হয়েছে। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেল। আরও আগে কথা শুরু হলে ভালো হতো। তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট করা আমাদের ঘোষিত অবস্থান।’

    বিধানভবন সূত্রের খবর, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সঙ্গে একেবারে শেষ মুহূর্তে কংগ্রেস কথা শুরু করলেও শুভঙ্কর এ দিনও তাঁদের প্রকাশ্যে অবস্থান খোলসা করতে চাননি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্য, ‘আমাদের সঙ্গে বামফ্রন্টের জোট ছিল। জোট এখনও ভেঙে যায়নি। সব কিছু আলোচনার মধ্যে রয়েছে। তবে অফিসিয়ালি কিছু হয়নি। এখন কৌশলগত কারণে পুকুরের অন্য পাড় দিয়ে আমরা হাঁটছি।’
  • Link to this news (এই সময়)