এই সময়: শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ঢাকুরিয়া স্টেশন থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত অংশের দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। এই দূরত্বটুকু পার করতে লোকাল ট্রেনের সময় লাগার কথা মাত্র ১২ মিনিট। ওই সামান্য সময়ের মধ্যেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হলো এক তরুণী এবং তাঁর পুরুষ বন্ধুর।সহযাত্রী তিন যুবক প্রথমে ওই তরুণী এবং তাঁর সঙ্গীর ছবি তোলার চেষ্টা করেন। আপত্তি জানালে হুমকি দিতে শুরু করেন সেই ছবি ‘ভাইরাল’ করে দেওয়ার। তরুণী ও তাঁর বন্ধু এর প্রতিবাদ করলে ট্রেন শিয়ালদহ স্টেশনে ঢোকার সময়ে সহযাত্রী তিন যুবক তরুণীর সঙ্গীকে বেধড়ক মারধর করেন বলেও অভিযোগ জমা পড়েছে রেলপুলিশের কাছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তিনজনকেই রেলপুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে পূর্ব রেল।
রবিবার রাতে ঠিক কী ঘটেছিল?
অভিযোগকারিণী রেলপুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, ‘রবিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ আমি এবং আমার সঙ্গী ঢাকুরিয়া থেকে ট্রেনে উঠেছিলাম শিয়ালদহে যাব বলে। আমরা যে কামরায় ছিলাম, পার্ক সার্কাস থেকে সেই কামরাতেই কয়েক জন যুবক ওঠে। তারা আমার ছবি তুলতে শুরু করে। আমরা প্রতিবাদ করায় ওরা বলে বেশ করছি।’
তাঁর সংযোজন, ‘এরপর আমাদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। কামরায় অন্য যে যাত্রীরা ছিলেন, তাঁরা কেউ একটি কথাও বলেননি।’ তরুণী জানিয়েছেন, তিনি তাঁর সঙ্গীর কাঁধে মাথা রেখে কামরার সিটে বসেছিলেন। সেই ছবিটাই তোলার চেষ্টা করে তিন জন। আপত্তি করলে তারা ওই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিতে শুরু করে।
ট্রেন যখন শিয়ালদহ স্টেশনের ২১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকছিল, সেই সময়ে কামরার মধ্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত। তরুণী সোমবার জানান, তিন যুবকের সঙ্গে তর্কাতর্কি চরম জায়গায় পৌঁছলে তিনি মেজাজ হারিয়ে একজনকে চড় কষিয়ে দিয়েছিলেন। এর পর পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। তরুণীর পুরুষ সঙ্গীকে কামরার তিন যুবক মিলে শিয়ালদহ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ফেলে মারধর করতে শুরু করে।
তরুণীর অভিযোগ, শিয়ালদহ স্টেশনে আসার পর প্রথমে রেলের তরফে কোনও নিরাপত্তারক্ষীর দেখাও পাওয়া যায়নি। অন্য যাত্রীদের কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি। যদিও রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের তরফে দাবি করা হয়েছে, রেলপুলিশের তৎপরতাতেই তিন যুবক ধরা পড়েন। এই প্রসঙ্গে শিয়ালদহ জিআরপির আইসি বাসুদেব মল্লিক বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আমরা তিন জনকে গ্রেপ্তার করে তদন্ত শুরু করেছি।’
অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঠিকই, তবে অভিযোগকারিণীর দাবি, শিয়ালদহ স্টেশনে রেলপুলিশের অফিসে বসে থাকার সময়েও পুলিশের সামনেই ধৃত তিন জন তাঁকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের একজন এমনও বলে, ‘জানিস আমরা কে?’ পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তরুণী ও তাঁর বন্ধুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনমাফিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। থানার মধ্যে বসে হুমকির ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি পুলিশের। ধৃতদের এ দিন আদালতে তোলা হলে তাদের ৮ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘পূর্ব রেল এই ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। লোকাল ট্রেন হোক বা স্টেশন চত্বর — যে কোনও জায়গাতেই মহিলাদের নিরাপত্তা আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পাবে।’