‘আমরণ অনশন’ প্রত্যাহারের পর পরবর্তী কর্মসূচির কথা সোমবার রাতেই ঘোষণা করেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই আন্দোলন করছি। সাধারণ মানুষের কথা আমরাই ভাবছি। আমরাই ভাবব। তাই এই অনশন প্রত্যাহার করলাম। আগামিদিনের কর্মসূচি হিসাবে ঘোষণা করছি, আগামী শনিবার মহাসমাবেশ ডাকছি। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে সেটা হবে।’’
গত ৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় ‘আমরণ অনশন’-এ বসেছিলেন ছয় জুনিয়র ডাক্তার। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার স্নিগ্ধা হাজরা, কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, এসএসকেএমের অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের তনয়া পাঁজা, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের পুলস্ত্য আচার্য, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়। পরের দিন, ৬ অক্টোবর ধর্মতলায় অনশনে যোগ দেন আরজি কর হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ‘আমরণ অনশন’-এ বসেন সেখানকার উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজের সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অলোক বর্মা। সোমাবর রাতে প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেন অর্ণব। তিনি বলেন, ‘‘আমি একটা কথা বলতে চাই, স্বাধীনতার পরে গণতন্ত্র বলতে যা বুঝি... সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে একটা দুঃখজনক জিনিস দেখতে পেলাম। বৈঠকে মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠানদের প্রতিনিধিদের চুপ করিয়ে দেওয়া হল। স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কী ভাবে খর্ব করা হল তা দেখতে পেলাম।’’ এর পর তিনি জানিয়ে দেন, নির্যাতিতার জন্য সুবিচারের দাবিতে প্রয়োজনে আবার ‘আমরণ অনশন’-এ বসবেন।
১০ অক্টোবর অনশনকারী অনিকেত অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১১ অক্টোবর অনশনে বসেন আরও দুই জুনিয়র ডাক্তার। তাঁরা হলেন ভিআইএমএস (শিশু মঙ্গল) হাসপাতালের পরিচয় পণ্ডা এবং কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের আলোলিকা ঘড়ুই। ১২ অক্টোবর ধর্মতলায় অসুস্থ হয়ে পড়েন অনুষ্টুপ। তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। ওই দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে অসুস্থ হয়ে পড়েন অলোক। তাঁকে ওই মেডিক্যাল কলেজেই ভর্তি করানো হয়। ১৩ অক্টোবর ধর্মতলায় অসুস্থ হয়ে পড়েন পুলস্ত্য। তাঁকে নীলরতন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। ১৪ অক্টোবর অসুস্থ হয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন তনয়া। ওই দিনই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে অনশনে বসেন সন্দীপ মণ্ডল। ১৫ অক্টোবর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনশনকারী সৌভিক। ওই দিনই ধর্মতলায় নতুন করে অনশনে বসেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্থের রুমেলিকা কুমার এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের স্পন্দন চৌধুরী। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলজে ও হাসপাতাল সূত্রে খবর, ১৬ অক্টোবর ছুটি পান অলোক। ১৮ অক্টোবর উত্তরবঙ্গের হাসপাতাল থেকে ছুটি পান সৌভিক। ১৯ অক্টোবর কলকাতার নীলরতন হাসপাতাল থেকে ছুটি পান পুলস্ত্য।
গত শনিবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ইমেল করে সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা জানান। সেখানে ‘শর্ত’ হিসাবে অনশন তুলে বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার কথা বলা হয়। যদিও জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়ে দেন, অনশন তাঁরা তুলবেন না।
সোমবার নির্ধারিত সময়ের আগেই নবান্নে পৌঁছে যান ১৭ জন জুনিয়র ডাক্তার। দু’ঘণ্টা আট মিনিট ধরে চলে বৈঠক। বৈঠকে একাধিক বিষয়ে আলোচনার পর অনশনমঞ্চে ফিরে এসে জুনিয়র ডাক্তারেরা অনশন প্রত্যাহারের কথা জানান। তবে এ-ও জানান, সরকারি অনুরোধে নয়, নির্যাতিতার বাবা-মায়ের কথাতেই অনশন তুলে নিলেন তাঁরা।