• কুপার্সে কালীপুজোর ‘বাড়াবাড়ি’র পিছনে অপরাধের দীর্ঘ ইতিহাস! 
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: রানাঘাট-বনগাঁ রেল লাইনে কুপার্স হল্ট রেলওয়ে স্টেশন। ভূতুড়ে গোছের স্টেশন। পাশেই বসবাস দেশভাগের সময় ছিন্নমূল হয়ে যাওয়া হাজার হাজার মানুষের। জনবসতির নাম ‘কুপার্স ক্যাম্প’। সেখানে এখন শাক্ত সাধনার ধুম! মাত্র ১২টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট এলাকায় শতাধিক কালীপুজো। তার উপর আড়ম্বরের প্রতিযোগিতায় সব উদ্যোক্তারা। কিন্তু কেন? উত্তর লুকিয়ে কুপার্স ক্যাম্প গঠনের ইতিহাসে। আর সেই ইতিহাসের পরতে পরতে জড়িয়ে অপরাধের কাহিনি। 

    একদা ব্রিটিশরা সেনাকর্মীদের ব্যবহারের জন্য গড়ে তুলেছিল রানাঘাট শহরের অনতিদূরে কিছু ক্যাম্প। ছিল হাসপাতাল, ছাউনি, গোডাউন। জরাজীর্ণ হলেও আজও সেগুলি ঔপনিবেশিক শাসনের সাক্ষ্য। আজকের কুপার্সের সেই রকম একটি ক্যাম্প থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কুপার্স হয়ে ওঠে উদ্বাস্তু মানুষদের ঠিকানা। ছিন্নমূল মানুষদের আশ্রয়স্থল। কিন্তু দারিদ্রতা, কর্মসংস্থানের অভাব ক্রমশ গ্রাস করে গোটা অঞ্চলকে। সেই সুযোগেই মাথাচাড়া দেয় অপরাধ। জুয়া,  সাট্টা, বেআইনি মদের ব্যবসা থেকে চুরি, ছিনতাই, ওয়াগন ভাঙার মতো গুরুতর অপরাধের আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠে এই নর্টিফায়েড এলাকাটি। বর্তমানে রানাঘাট এবং সংলগ্ন এলাকার বহু প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজসেবী অথবা সাধারণ পেশায় যুক্ত মানুষ তাঁদের প্রথম জীবনে যুক্ত ছিলেন এই অপরাধ জগতের সঙ্গেই। তাঁরাই পরবর্তী সময়ে পাপস্খলনের জন্য শুরু করেন মা কালীর আরাধনা। এরপর সময় যত গড়িয়েছে ততই বেড়েছে কালীপুজোর সংখ্যা। পরে সাধারণ বাসিন্দারাও নিজেদের উপার্জিত অর্থে শুরু করেছেন পুজো। ফলে, খুব অল্প সময়েই কুপার্সের মূল উৎসব হয়ে ওঠে কালীপুজো। পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র ১.৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই বড়-মাঝারি-ছোট মিলিয়ে প্রায় ১০৬টি কালীপুজো হয়। এর মধ্যে প্রায় ৫১টি বিগ বাজেটের পুজো। 

    পুলিসের একটি সূত্রের দাবি, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অপরাধ জগত থেকে অর্জিত বিপুল টাকার চাঁদার কারণেই একটা সময় কালীপুজোর এই বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়। পরে অবশ্য অপরাধকর্মের মাথারা সরে আসেন সমাজের মূলস্রোতে কেউ রাজনীতি, কেউ সমাজসেবা অথবা অন্য কাজে যোগ দেন। সাঙ্গপাঙ্গরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যায়। বর্তমানে তাঁদেরই পরবর্তী প্রজন্ম সাইবার প্রতারণায় হাত পাকিয়েছে বলে অভিযোগ। চাকরি দেওয়ার নামে আর্থিক প্রতারণা, ওটিপি জেনে অ্যাকাউন্ট সাফ করার ঘটনা ঘটছে আকছার। অনেকেই কুপার্স ক্যাম্পকে বঙ্গের ‘জামতাড়া’ বলেও অভিহিত করেন। কিন্তু সম্প্রতি পুলিসের লাগাতার নজরদারি এবং ধরপাকড়ে অনেকটাই ব্যাকফুটে তারা। অপরাধ জগতের সেই সুদিনও এখন আর নেই। ফলে, কিছুটা হলেও জৌলুস কমেছে কুপার্সের বিখ্যাত কালীপুজোগুলির। তবে, পুজোর সংখ্যা খুব একটা কমেনি। আর কমেনি বলেই কুপার্সের অপরাধের ইতিহাস উঁকি মারে কালীপুজোয়।   নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)