• আউশগ্রামে জঙ্গলের মাঝে পরিত্যক্ত গ্রামে পুজো হয় ‘শালকো’ কালীর
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: আউশগ্রামের আদুরিয়ায় গভীর জঙ্গলে এখনও বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়েই ‘শালকো’ কালীর পুজো হয়। টিনের ছাউনি দেওয়া বেদিতে নিঃশব্দে দেবীর আরাধনা করেন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। কারণ শালকোয় এখন আর কেউ থাকেন না। জঙ্গল গ্রাস করেছে পুরো গ্রামকে। তবে কালীপুজোর রাতে এখানে আবার মানুষ ফিরে আসে। আশপাশের গ্রামের মানুষ পুজোয় অংশ নেন।

    আউশগ্রামের অমরপুর অঞ্চলে এই শালবন রয়েছে। আদুরিয়া গ্রাম থেকে প্রায় দু’কিমি দূরে শালবনের মধ্যে রয়েছে একটি বেদি। জনশ্রুতি রয়েছে, ওই বেদির তলায় রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির আসন। সেই আসনে দেবী কালীকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শালকো গ্রামের বাসিন্দারা। সেই থেকেই এখানে শ্মশানকালীর পুজো হয়ে আসছে।

    এই এলাকার ইতিহাস করুণ। একসময় এই জঙ্গলের মধ্যে ‘শালকো’ নামে একটি গ্রাম ছিল। সেখানে ২০০’র বেশি পরিবারের বসবাস ছিল। বহু বছর আগে গ্রামে কলেরার প্রকোপ দেখা দেয়। গ্রামের বহু মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাকি বাসিন্দারা রাতারাতি গ্রাম ছেড়ে পালান। তাঁরা শালকো থেকে উঠে গিয়ে আদুরিয়া, জালিকাঁদর, গোয়ালআড়া প্রভৃতি গ্রামে আশ্রয় নেন। তারপর আর কেউ ফিরে আসেননি। পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি কালের নিয়মে জঙ্গলের মধ্যে হারিয়ে যায়। গ্রাম ছাড়ার আগে এখানকার কালীপ্রতিমাও অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এলাকার মানুষ। কিন্তু তাঁদের বিশ্বাস, দেবী নিজের আসন ছেড়ে অন্যত্র যেতে রাজি হননি। তাই এখনও শালবনের জঙ্গলে এসেই দেবীর পুজো করতে হয়। গ্রামের বাসিন্দা তুহিন কোনার বলেন, বছরের প্রত্যেক অমাবস্যায় দেবীর পুজো দিতে হয়। মূল পুজো হয় কার্তিকী অমাবস্যায়। পুজোর প্রয়োজন ছাড়া অন্য সময়ে কেউ শালকো কালীর স্থানের আশপাশে ঘেঁষেন না। একবার চাঁদা তুলে একটি মন্দির গড়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু যতবার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, ততবারই বাধা-বিপত্তির মুখে পড়তে হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, দেবী বদ্ধ ঘরে থাকতে চান না। তাই মন্দির গড়া হয়নি। শুধু একটি টিনের ছাউনি তৈরি হয়েছে। পুজোর সময় ছাউনির পিছন দিক শালপাতা দিয়ে আড়াল করে দিতে হয়। রীতি অনুযায়ী, শালকো কালীর পুজোর সময় কোনও বৈদ্যুতিক আলো জ্বালানো যায় না। বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়ে দেবীর আরাধনা করা হয়। 

    আউশগ্রামের আদুরিয়া জঙ্গলে এখানেই শালকো মায়ের পুজো হয়।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)