• ঘটনার সময় রাহুলের মোবাইল কেন বন্ধ?
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণনগরের ছাত্রীর মৃত্যুর দিন নিজের ফোন সুইচ অফ করে রেখেছিল ধৃত রাহুল বসু। রাতের দিকে বাড়ি ফিরে ফোন সুইচ অন করে। তারপর একঘণ্টা নতুন ‘প্রেমিকে’র সঙ্গেও কথা বলে। এই ফোন সুইচ অফ করে রাখা নিয়েই রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে।‌ কেন ঘটনার সময়েই তার ফোন সুইচ অফ থাকল? এমনকী ওই সময় রাহুল বাড়িতে ফোন রেখে কেন বেরিয়ে এল? সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারী অফিসাররা। তার জন্য রাহুলকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃত ছাত্রী ও রাহুলের ‘কমন ফ্রেন্ড’দেরও দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ছ’জন বন্ধুকে পুলিস জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাদের বয়ান একে অপরের সঙ্গে কতটা মিলছে কিংবা কথায় কোনও অসঙ্গতি আসছে কি না, তাও তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন। 

    তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, ‘রাহুল এমন ছেলে নয়, যে বাড়িতে ফোন রেখে যাবে কিংবা সুইচ অফ করে রাখবে। বিগত এক মাসে ওর ফোন কখনও সুইচ অফ হয়নি। ঘটনার দিন রাতে ঠিক ওই সময়েই ফোন সুইচ অফ থাকাটা আমাদের কাছেও কৌতূহলের বিষয়। সেটাই আমরা খতিয়ে দেখছি। এখনই কোনও সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়। আমরা সমস্ত দিক খোলা রেখেই তদন্ত করছি।’

    ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পুলিসের কাছে চলে এসেছে। সেই রিপোর্টে যৌন নিগ্রহের কথা বলা হয়নি। ছাত্রী জীবন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শরীরের ৯০ শতাংশ আগুন পুড়ে গিয়েছিল বলে জানানো হয়েছে। যা ছাত্রীর আত্মহত্যার তত্ত্বকেই জোরালো করছে। যদিও পুলিস এখনই ধৃত প্রেমিক রাহুলকে সন্দেহের বাইরে রাখতে নারাজ। কারণ, গোটা ঘটনায় বেশকিছু মিসিং লিঙ্ক রয়েছে, যা গোয়েন্দাদের ভাবাতে বাধ্য করছে। 

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে একটি মুখবন্ধ কেরোসিনের বোতল উদ্ধার হয়। সেটি কোথা থেকে ঘটনাস্থলে এল? ছাত্রী নিজে নাকি রাহুল সেই বোতল এনেছিল? সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ফিঙ্গার প্রিন্টের ম্যাচিংয়ের সাহায্য নিচ্ছে পুলিস। ইতিমধ্যেই বিশেষ প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলের ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে প্রথমে রাহুল ও পরে মৃত ছাত্রীর ফিঙ্গার প্রিন্ট ম্যাচ করানো হবে। এমনকী সন্দেহের তালিকায় থাকা বন্ধুদের ফিঙ্গার প্রিন্ট ম্যাচ করে কি না তাও দেখা হবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই আত্মহত্যা নাকি খুন, তা বোঝা যাবে। 

    পাশাপাশি ঘটনার দিন রাতে মৃত ছাত্রী কোথায় কোথায় গিয়েছিল, তার টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করা হবে। তার সঙ্গে ফোন ঘরে রেখে আসার আগে রাহুলের ফোনের টাওয়ার লোকেশন কী ছিল, সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিস। পুলিসের দাবি, তদন্তে দেখা গিয়েছে অতীতে একাধিকবার ওই ছাত্রী ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তাই ওই এলাকা যে নিরিবিলি ও শুনশান তা ছাত্রী জানতেন।

    পুলিস সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ গভর্নমেন্ট কলেজের মাঠের আশেপাশে ওই ছাত্রী গিয়েছিলেন। রাত ১০টা বেজে ৮ মিনিটে রাহুলকে কোতোয়ালি থানার সামনে দেখা যায়। ১০টা বেজে ১৫ মিনিট নাগাদ রাহুল তার বন্ধুর ফোন ব্যবহার করে মৃত ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে। সেই সময় রাহুলের ফোন সুইচ অফ ছিল। ঠিক তার পরেই সাড়ে ১০টা নাগাদ সিসিটিভি ফুটেজে ওই ছাত্রীকে ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। তার পিছনে এক যুগলকেও বাইক নিয়ে যেতে দেখা যায়। তারা কারা? সেই প্রশ্ন নিয়েও রহস্য বাড়ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)