• ‘ডানা’র মোকাবিলায় তৈরি জেলা প্রশাসন
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র মোকাবিলায় পূর্ব মেদিনীপুরে সমুদ্র উপকূল বরাবর পাঁচটি ব্লকে ৬০টি ত্রাণশিবির প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। রামনগর-১ ও ২, কাঁথি-১, দেশপ্রাণ এবং খেজুরি-২ব্লক প্রশাসনকে প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সহ মৎস্য অধিকর্তা(মেরিন)অফিস থেকে সোমবার মৎস্যজীবীদের ফিরে আসার জন্য মাইকিং করা হয়। নবান্ন থেকে প্রতি মুহূর্তে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে রিপোর্ট চাওয়া হয়। কত সংখ্যক মৎস্যজীবী সমুদ্র থেকে ফিরলেন, তা নিয়ে দফায় দফায় রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় নবান্ন। এদিন দুপুর পর্যন্ত সমুদ্রে যাওয়া ৫০শতাংশ মৎস্যজীবী ফিরে এসেছেন। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন অফিসে ২৪ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম চালু করেছে প্রশাসন। আজ, মঙ্গলবার জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী দীঘায় পৌঁছবেন।

    পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সমুদ্র উপকূল বরাবর ৪৩টি মাল্টি পারপাস সাইক্লোন শেল্টার আছে। বিডিওদের কাছে প্রত্যেকটির চাবি রয়েছে। সাইক্লোন সতর্কতায় সেসব পরিষ্কার করে মানুষজনের থাকার মতো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আরও পাঁচটি মাল্টি পারপাস রেসকিউ শেল্টার(এমপিআরএস) তৈরির কাজ শেষের পথে। তারমধ্যে চারটির কাজ সম্পূর্ণ। ওই চার জায়গায় মানুষজনকে সরানোর পরিকল্পনাও থাকছে। এছাড়াও ১৭টি স্থায়ী ফ্লাড শেল্টার রয়েছে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে ওইসব শেল্টারও রেডি রাখছে প্রশাসন।

    ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মুখ্যসচিব ভার্চুয়াল মিটিং করেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন, সকল সরকারি দপ্তরের জেলা অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ার ওই মিটিংয়ে অংশ নেন। সেখানে সাইক্লোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আমলা। সন্ধ্যায় জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী প্রত্যেক মহকুমা শাসক, বিডিও এবং সরকারি দপ্তরের জেলা অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে মিটিং করেছেন। সেখানে কৃষি, সেচ, কৃষি-সেচ, জনস্বাস্থ্য, পূর্ত ও বিদ্যুৎ বণ্টন সহ প্রতিটি দপ্তরকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কাদের কী দায়িত্ব সেসব স্পষ্ট করে দিয়েছেন জেলাশাসক।

    ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। গাছপালা পড়ে লাইন কেটে যায়। বিভিন্ন জায়গায় খুঁটি, ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সাপ্লাই অফিস এবং সাবস্টেশনে ঠিকাদারদের অধীনে কর্মীরা থাকবেন। বণ্টন সংস্থার নিজস্ব ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীরাও থাকবেন। পর্যাপ্ত ইলেক্ট্রিক সরঞ্জাম মজুত রয়েছে বলে পূর্ব মেদিনীপুরের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার রিজিওনাল ম্যানেজার রঞ্জিতকুমার মণ্ডল জানান।

    ওড়িশা লাগোয়া কাঁথি এবং এগরা মহকুমায় ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা প্রবল। তাই জমা জল দ্রুত বের করার জন্য পাম্প মজুত করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। কৃষি-সেচ দপ্তরকে এনিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। প্রত্যেক বিডিও এবং এসডিও অফিসে ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনমতো সরবরাহ করা হবে। পর্যাপ্ত পানীয় জলের পাউচ মজুত করা হচ্ছে। নদী ও সমুদ্রবাঁধে নজরদারি বাড়ানোর জন্য সেচদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইমতো দপ্তরের তরফে টিম গঠন করা হয়েছে। কৃষিদপ্তরের তরফে কাঁথি এবং এগরা মহকুমা এলাকায় প্রচার চালানো হচ্ছে।

    জেলাশাসক বলেন, আমরা সব রকমভাবে প্রস্তুতি সেরে রেখেছি। কাঁথি ও এগরা মহকুমা এলাকায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সেইমতো প্রস্তুতি সেরে রাখা হচ্ছে। জমা জল বের করার জন্য পাম্প রেডি থাকছে। কোথাও ফসল তোলার মতো পরিস্থিতি হলে সেই শস্য তুলে নেওয়ার জন্য চাষিদের বলা হয়েছে। উপকূল এলাকা থেকে মানুষজনকে সরানোর মতো পরিস্থিতি হলে আমরা সেরকম পদক্ষেপ নেব। সবরকমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)