• মহারাষ্ট্রের পূর্ব ভাইন্দরে দুই মেদিনীপুর, হুগলির বাঙালিরা মাতেন কালীপুজোয় 
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • কাজলকান্তি কর্মকার, ঘাটাল: কথায় আছে বাঙালি যেখানেই থাকে, সেই এলাকাকে নিজের মতো করে নেয়। নিজেদের মতো করেই উৎসবে মেতে ওঠে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং হুগলি জেলার বাঙালিদের উদ্যোগে মহারাষ্ট্রের পূর্ব ভাইন্দরের কালীপুজো তেমনই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রতি বছর কালীপুজোর ক’দিন ভাইন্দরকে কার্যত বাঙালি শহরে পরিণত করেন এরাজ্যের বাঙালিরা।

    ঘাটাল মহকুমা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং হুগলি জেলার একাংশের বেশকিছু যুবক কর্মসূত্রে পূর্ব ভাইন্দরে রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও। কাজের চাপ থাকায় অধিকাংশেরই পুজোয় গ্রামের বাড়ি ফেরা সম্ভব হয় না। তাই ২০১১ সালে দাসপুর থানার হরিরামপুরের সুকুমার মণ্ডল ও অনুপ মাইতি, নহলা চাঁইপাটের দিলীপ মাইতি, কামালপুরের স্বদেশ সামন্ত, পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের আদিত্য দাস প্রমুখের উদ্যোগে ‘মা আনন্দময়ী সেবা মণ্ডল’-এর ব্যানারে পূর্ব ভাইন্দরের নবঘর রোডের উপর শ্যামাকালী পুজোর সূচনা হয়। সেই পুজো বর্তমানে মহীরুহের আকার নিয়েছে। এই মুহূর্তে ওই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা ৩৭৫জনের বেশি। পুজোয় ওই এলাকায় থাকা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং হুগলির প্রায় ৫০০টি পরিবার অংশগ্রহণ করে। 

    আশিস প্যালেসের সামনে সুদৃশ্য মণ্ডপ তৈরি হয়। প্রতিমা তৈরি করেন ২৪ পরগনার প্রদীপ মণ্ডল, পুজোয় পুরোহিত হিসেবে থাকেন কলাঘাটের মানস চক্রবর্তী। ঢাকিও এই রাজ্যের বাঁকুড়া থেকে যান। এরাজ্যের মতোই সেখানে কালীপুজো হয়। তবে কালীপুজোয় পশুবলি দেওয়া হয় না। পরিবর্তে চালকুমড়ো, আখ প্রভৃতি বলি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। পুজোর আগে ঘটা করে খুঁটিপুজো হয়। তা ঘিরেও আনন্দে মাতেন তাঁরা। পুজোর সময় চারদিন ধরে সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি সহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, খেলাধুলোর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহিত করতে তাঁদের হাতে নানা ধরনের উপহারও তুলে দেওয়া হয়। সম্পাদক দিলীপবাবু এবং সভাপতি অনুপবাবু জানান, পুজোর প্রথম রাতে প্রায় চার হাজার মানুষকে বসিয়ে প্রসাদ খাওয়ানোর ব্যবস্থা থাকে। তাছাড়াও পুজোর বাকি দিনগুলিতে প্রতিদিন প্রায় ৫০০জনের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেন উদ্যোক্তারা।  

    পুজোর শেষদিনের সিঁদুর খেলা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পুজো কমিটির সদস্যা শম্পা মাইতি, দেবশ্রী খাটুয়া, অর্চনা বেরা, মানসী মাইতি প্রমুখ বলেন, এলাকার সমস্ত বাঙালি মহিলারা মিলে দুপুর ১২টা থেকে সিঁদুর খেলা শুরু করি। প্রায় সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত ওই খেলা চলে। অবাঙালি প্রচুর মহিলা আমাদের সিঁদুর খেলা উপভোগ করেন। সন্ধ্যার পর চৌপাটিতে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। মা আনন্দময়ী সেবা মণ্ডল কালীপুজোর সঙ্গে এলাকায় রক্তদান, ভাইন্দরের ঝাড়ুদারদের সম্মানিত করার পাশাপাশি নানা ধরনের সমাজ সেবামূলক কাজও করে। সেই সঙ্গে নেতাজি জন্মজয়ন্তী, স্বাধীনতা দিবস ও বসন্ত উৎসবও পালন করে বলে দিলীপবাবু জানান।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)