• মমতার বৈঠকের পর উঠল অনশন, অভয়াকে ‘সামনে রেখে’ ডাক্তারদের দাবিজুড়ে শুধুই কমিটি
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ৪৫ মিনিটের বৈঠক চলল টানা ২ ঘণ্টা ১১ মিনিট। নির্ধারিত কর্মসূচি পিছলেন। ধৈর্য ধরে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিটি দাবি শুনলেন বারবার। সমাধানসূত্রও দিলেন। আইন এবং প্রশাসনের জটিলতার জন্য যে সব দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়, অকপটে স্পষ্ট করে দিলেন সেগুলিও। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য ছিল একটাই—জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন থেকে ফিরিয়ে তাঁদের হাত ধরেই সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সুস্থ ও সামাজিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা। লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে গোটা রাজ্য দেখল সেই আলোচনা। বৈঠক শেষ হওয়ার ঘণ্টা তিনেক পর অনশন তুলে নিলেন আন্দোলনকারী ডাক্তাররা। কিন্তু এর মধ্যেও জানিয়ে রাখলেন, তাঁদের নাকি নবান্ন সভাঘরে রীতিমতো থ্রেট করা হয়েছে। তাই অনশন তুললেও আন্দোলন বন্ধ হবে না।

    সোমবার প্রত্যেকের নজরই ছিল নবান্নের বৈঠকের দিকে। অভয়ার বিচার—সাধারণ মানুষ তো এটাই চেয়ে এসেছে। দাবি তুলেছে, প্রত্যেক দোষীর যেন শাস্তি হয়। কিন্তু এদিনের বৈঠকে বিচারই চলে গেল পিছনের সারিতে। গুরুত্ব পেল নানাবিধ ‘কমিটি’ গঠন এবং তাতে জুনিয়র ডাক্তারদের অন্তর্ভুক্তি। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রত্যেক প্রতিনিধিই প্রায় এই এক দাবি তুললেন। জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ আগেই দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার মধ্যে রাজ্যে কিন্তু ইতিমধ্যেই টাস্ক ফোর্স গঠন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার বাইরেও পাঁচ রকমের কমিটি তৈরি এবং প্রত্যেকটিতে ডাক্তারদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতির দাবি তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। তবে সবটাই অভয়াকে ‘সামনে রেখে’। পরে সাংবাদিক সম্মেলনেও তাঁরা দাবি করেছেন, অভয়ার মতো ঘটনা যাতে আর না হয়, সেই জন্যই কমিটি এবং টাস্ক ফোর্সে তাঁদের বেশি সংখ্যক সদস্যের অন্তর্ভুক্তি দরকার। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য কমিটি গঠনে সামঞ্জস্য রাখার ক্ষেত্রেই বেশি জোর দিয়েছেন। টাস্ক ফোর্সে রাজ্যের পাঁচ আধিকারিক সহ একজন মহিলা পড়ুয়া ডাক্তার, দু’জন করে রেসিডেন্ট ডাক্তার এবং জুনিয়র ডাক্তারকে রাখার দাবিও মেনে নেন। তার পাশাপাশি জুনিয়র ডাক্তারদের প্রত্যেকটি পরামর্শ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে।

    দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগের তথ্য হিসেবে এক দিস্তা কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন আন্দোলনকারী ডাক্তাররা। সেই নথি মুখ্যমন্ত্রী জমা নিয়েছেন। কিন্তু পাশাপাশি এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, স্বাস্থ্য সচিবের মতো একজন অফিসারের বিরুদ্ধে প্রমাণ ছাড়া তাঁকে ‘অভিযুক্ত’ বলে দেগে দেওয়া যায় না। আলোচনায় একে একে উঠে এসেছে থ্রেট কালচার প্রসঙ্গ এবং আর জি করে ৫৯ জনকে সাসপেন্ড করার ঘটনাও। নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে মমতা তাঁদের জানিয়েছেন, বিচারাধীন বিষয়। কিন্তু প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে প্রত্যেকের বক্তব্যই শুনতে হবে তাঁকে। তারপরও যদিও কমিটি গঠন নিয়ে বারবার একই কথা একাধিক প্রতিনিধি বলতে থাকেন। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে মুখ্যমন্ত্রী কিছুটা চড়া সুরেই বলেন, ‘একটা কলেজে কতগুলো কমিটি হবে?’ 

    সবকিছু ছাপিয়ে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন স্বাস্থ্য-শিক্ষায় সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলাকেই। ১৪ আগস্ট আর জি করে ভাঙচুরের প্রসঙ্গ টেনে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি কিঞ্জল নন্দ এ ব্যাপারে বক্তব্য রাখলে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে সমর্থন করেন মমতা। বলেন, ‘আমি একমত। চিকিৎসা ব্যবস্থায় সুস্থ ও সামাজিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। থ্রেট কালচারে ইতি টানতে হবে। কেউ কাউকে থ্রেট করবে না। আমরা চাই গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসুক।’ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘পরীক্ষা যেন ঠিকঠাক হয়। না হলে ডাক্তারি পাশ করার পর কেউ কেউ তো পেট কাটতে গিয়ে গলা কেটে ফেলবে।’ তারপরই তিনি পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেন মুখ্যসচিবকে। বলেন, ‘দু’-তিন বছরের খাতা কোনও কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে দেখালে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। তবে আমরাই সে কাজ সঠিক পদ্ধতি মেনে করব, যাতে কারও প্রতি অবিচার না হয়।’
  • Link to this news (বর্তমান)