• পুরী থেকে সাগরদ্বীপের মধ্যে যে কোনও জায়গায় আছড়ে পড়বে ‘ডানা’
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বঙ্গোপসাগরের তীব্র ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ ওড়িশার পুরী থেকে পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যবর্তী কোনও জায়গায় উপকূলে আছড়ে পড়বে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর সোমবার এই কথা জানিয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের  কেন্দ্রস্থল (আই) স্থলভাগে ঢুকে পড়ার (ল্যান্ডফল) প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এই সময় সেখানে ঝোড়ো হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার হতে পারে। ‘ডানা’ ঠিক কোথায় আছড়ে পড়বে, তার আরও নির্দিষ্ট পূর্বাভাস পরবর্তী পর্যায়ে দেবে আবহাওয়া দপ্তর। স্থলভাগে ঢুকে পড়ার পর এটি কোন দিকে যাবে, তাও জানা যাবে শীঘ্রই। তবে যেখানেই ল্যান্ডফল হোক না কেন, এর প্রভাব পড়তে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের অধিকর্তা হবিবুর রহমান বিশ্বাস জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের ‘আই’-কে কেন্দ্র করে ২৫০-৩০০ কিলোমিটার এলাকায় ভালোরকম প্রভাব পড়ে। তাই বৃহস্পতি ও শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির লাল ও কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। লাল সতর্কতা থাকছে দুই মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও ঝাড়গ্রাম জেলায়। কমলা সতর্কতা দেওয়া হয়েছে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলার জন্য। বুধবার দুই ২৪ পরগনা ও দুই মেদিনীপুর জেলায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। অতি বৃষ্টিতে নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়া ও কংসাবতী, নিম্ন দামোদর অববাহিকা এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে আবহাওয়া দপ্তর। বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় বিভিন্ন জেলায় কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তা বিস্তারিত জানানো হয়েছে প্রশাসনকে। 

    ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে দিল্লি ও কলকাতায়। কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব টি ভি সোমানাথনের নেতৃত্বে ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি সোমবার বৈঠকে বসে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং ওড়িশার মুখ্যসচিব ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেই বৈঠকে যোগ দেন। ঘূর্ণিঝড় সামাল দিতে আগাম কী কী ব্য‌বস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চায় কেন্দ্র। তারা জানায়, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১৪টি টিম পশ্চিমবঙ্গে, ১১টি টিম ওড়িশায় পাঠানো হয়েছে। ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যে সহায়তা করার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষী বাহিনীকে। এদিন সন্ধ্যায় নবান্নে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বিশেষ বৈঠকে বসেন মুখ্যসচিব। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিক, পুলিসকর্তা এবং আবহাওয়া দপ্তরের কর্তারা বৈঠকে ছিলেন। জেলা প্রশাসনগুলিকে সম্ভাব্য দুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পাঠানো ও মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। উপকূলবর্তী এলাকায় মানুষকে সতর্ক করতে মাইকিং শুরু হয়েছে। কৃষিদপ্তর বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করেছে চাষিদের জন্য। দক্ষিণবঙ্গের  যেসব ‌জায়গায় ধান ৮০ শতাংশ পেকে গিয়েছে, দ্রুত তা কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সব্জি, ফলের জমিতে জমা জল বার করার জন্য ব্যবস্থা রাখা এবং ঝোড়ো হাওয়া থেকে বাঁচাতে মাচা বেঁধে রাখার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। 

    আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে এদিনই সুস্পষ্ট নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আজ, মঙ্গলবার সকালের মধ্যে এটি শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। বুধবার ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ বঙ্গোগপসাগরের ওই অংশে সৃষ্টি হবে। তারপর উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসবে। 
  • Link to this news (বর্তমান)