• বর্ধমান মেডিক্যালে সিপিএম জমানার হাড়হিম অভিজ্ঞতা, ‘কোন রোগী বেড পাবেন আর মাটিতে কে থাকবেন, তাও ঠিক করে দিত ওরা’  
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: ‘বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ’৮৫ সাল থেকে কীভাবে কলেজ লাইফের দিনগুলি কেটেছে, মনে করলে আজও শিউরে উঠি। ওঁরা আজ বলছেন থ্রেট কালচারের কথা? নিজেরাই তো ছিলেন থ্রেটের প্রতিমূর্তি! হঠাৎ মনে হল, দু’ঘা মেরে চলে যেত নেতারা। এসএফআই করতাম না বলে এতটাই ভয়ের মধ্যে রেখেছিল যে হস্টেলে থেকে এমবিবিএস পরীক্ষা দিতে পারিনি। মেরে বার করে দিয়েছিল। বাবা তখন ন্যাশনাল মেডিক্যালের সার্জারির অধ্যাপক। অনেকে কলকাতায় আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিল। প্রিন্সিপাল বাবার ছাত্র ছিলেন। তাঁকে বাবা বললেন, কলেজে ওরা থাকলে কী হবে জানি না। ওরা বরং আমার বাড়িতে থাক। শেষে আমরা কয়েকজন একটি বোর্ডিং থেকে পুলিসি নিরাপত্তায় পরীক্ষার হলে যেতাম।’ বাম জমানার ‘থ্রেট কালচার’-এর এমনই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা এক নাগাড়ে বলে যাচ্ছিলেন বিশিষ্ট গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজিস্ট ডাঃ সত্যপ্রিয় দে সরকার। তাঁর কথায়, ‘আজকের সমাজ সংস্কারকরা বলছেন সুষ্ঠু ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা। ১৯৮৫ থেকে ২০১০—দীর্ঘ এই ২৫ বছরে বর্ধমান মেডিক্যালে নির্বাচন হয়েছে? কেমন হয়েছিল সেই ভোট, জানেন? জানেন তাঁরাই, যাঁরা ওই সময় কলেজে পড়াশোনা করেছেন। এসএফআইয়ের ছেলেরা ঠিক করে দিত কারা থাকবে। আজকে যাঁরা বিচার চেয়ে মিছিলে হাঁটছেন, তাঁদের অনেকে কী ধরনের থ্রেট কালচার চালাতেন, আমরা ভালোই জানি।’ 

    ডাঃ দে সরকারের অভিযোগ, হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীভর্তিও তখন নিয়ন্ত্রণ করত সিপিএমের গুন্ডারা। ডাক্তারদের শাসাত। কোন রোগী বেড পাবেন, কে মাটিতে থাকবেন, সব ঠিক করে দিত ওরা। এমনকী, কোন রোগীর খাবার কেমন হবে, তাও বলে দিত। কথায় কথায় শাসানি, ধমকানি ছিল জলভাত। যদিও সিপিএমের ডাক্তার সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক ডাঃ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘আমাদের সময়ে সব মেডিক্যাল কলেজে ফি-বছর ভোট হতো। হয়তো কখনও আমাদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততেন। আমাদের সময়ে থ্রেট হয়েছে বললে তো হবে না, প্রমাণ দিন। আমি কিছু মনে করতে পারছি না।’ তবে উৎপলবাবুর দাবি নস্যাৎ করে অসংখ্য সরকারি সিনিয়র চিকিৎসক জানিয়েছেন, সিপিএম জমানায় বর্ধমান, এনআরএস, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ সহ অসংখ্য মেডিক্যালে বছর বছর ভোট হয়নি। বিশেষত জেলার কলেজগুলিতে নির্বাচন হতোই না। ভোট হয়েছে বলে খাতায়কলমে দেখানো হলেও বাস্তবে প্রহসন হতো। সত্যপ্রিয়বাবু বলেন, ‘এসএফআই না করলে প্রেম করতে দিত না। ছেলেমেয়েদের ধরে প্রিন্সিপালের কাছে নিয়ে যেত। মাস্টারমশাইরা বলতে বাধ্য হতেন, ইউনিয়নের এই পাঁচটা ছেলেকে পাশ করাতে হবে। তাদের হাতে প্রশ্নপত্র দিয়ে দিত। হস্টেলের ঘর কে পাবে, এসএফআইয়ের দাদারা ঠিক করে দিতেন। গোলমাল হলেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিলপিল করে এসএফআই সমর্থকরা ঢুকে হস্টেলের ঘর ভাঙচুর করে চলে যেত। স্টেশনে যাওয়ার রাস্তায় হাঁটতাম ভয়ে ভয়ে। এই বোধহয় রাস্তায় ধরে মারবে। এই বোধহয় বইপত্র সব কেড়ে নেবে। তাঁরা আজ বলছেন সমাজ সংস্কারের কথা?’ এসএফআইয়ের রাজ্য সহ সভাপতি শুভজিৎ সরকার বলেন, ‘থ্রেট কালচার সমর্থন করি না। তবে কলেজে ভোট না হওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর তৃণমূল জমানায় থ্রেট কালচারের সঙ্গে জুড়েছে টাকাপয়সার লেনদেন।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)