• ৪২৩ কোটির জিএসটি ফাঁকি দিয়েছে রেল, ডাক বিভাগই!  
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’ বোধ হয় একেই বলে! আইন ও বিধির ফাঁক গলে প্রতি বছর জিএসটি বাবদ কর ফাঁকি ও জালিয়াতির ঘটনা লাফিয়ে বাড়ছে। এবার সামনে এল খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের দুই মন্ত্রকের বিপুল পরিমাণ জিএসটি ফাঁকির তথ্য। একটি রেলমন্ত্রক। অপরটি যোগাযোগ মন্ত্রকের অধীন ডাক বিভাগ। জিএসটি ফাঁকি সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দাবি করেছে, কেন্দ্রের এই দুই মন্ত্রক থেকে জিএসটি ফাঁকির অঙ্ক ৪২৩ কোটিরও বেশি টাকা। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন রাজ্য সরকারি সংস্থা যে হারে জিএসটি ফাঁকি দিচ্ছে, সেই টাকার অঙ্কও কয়েক হাজার কোটি। রাজ্যগুলির মধ্যে এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে মহারাষ্ট্র। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে করফাঁকির এই চিত্র সামনে এসেছে।

    পরোক্ষ কর পর্ষদের আওতাধীন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব জিএসটি ইন্টেলিজেন্স (ডিজিজিআই) কর ফাঁকি রুখতে কাজ করে। সংস্থার কর্তারা জানাচ্ছেন, ডাক বিভাগের অধীন ডিরেক্টরেট অব পোস্টাল লাইফ ইনসিওরেন্সের মোট ১২৬ কোটি ১৮ লক্ষ টাকার জিএসটি ফাঁকির তথ্য হাতে এসেছে। দেশজুড়ে ২৩টি সার্কেল থেকে তারা ডাক জীবন বিমা এবং গ্রামীণ ডাক জীবন বিমা বিক্রি করে। যেসব এজেন্ট এই বিমা পলিসিগুলি বিক্রি করেন, তাঁদের প্রাপ্য কমিশন থেকে জিএসটি বাবদ টাকা কেটে জিএসটি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা করাটাই নিয়ম। কিন্তু টাকা কেটে নেওয়া হলেও তা ডাকবিভাগ জমা করেনি বলেই জানাচ্ছেন ডিজিজিআই আধিকারিকরা। রেলের জিএসটি ফাঁকি নিয়ে কী জানাচ্ছে ইন্টেলিজেন্স? ভারতীয় রেলওয়ের আওতাধীন ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফিনান্স কর্পোরেশনের জিএসটি বাবদ মেটানোর কথা ছিল ২৯৭ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা। কিন্তু তারা সেই টাকা মেটায়নি। ভোপাল জোনের অফিসাররা এই করফাঁকির হদিশ পেয়েছেন। আর ডাকবিভাগের করফাঁকির তথ্য সামনে এনেছেন চন্ডীগড়ের অফিসাররা।  

    রাজ্য সরকারি সংস্থাগুলির জিএসটি ফাঁকির নিরিখে সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছে মহারাষ্ট্র। মুম্বইয়ের আবাসন ও শিল্পোন্নয়ন নিগম শহরের পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে। তারা আবাসন ও বাণিজ্যিক জমি ও পরিকাঠামো লিজ দেওয়ার উপর জিএসটি আদায় করলেও কোনও টাকা জমা করেনি। এক্ষেত্রে ১১১ কোটি টাকার কর ফাঁকির তথ্য উঠে এসেছে। মহারাষ্ট্র সরকারের শিল্পোন্নয়ন নিগম একইভাবে লিজ বাবদ নেওয়া জিএসটির টাকা মেটায়নি কেন্দ্রীয় সরকারকে। টাকার অঙ্ক ৬৭৮ কোটি! সড়ক থেকে টোল নেওয়ার জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে বরাত দেয় মহারাষ্ট্র স্টেট রোড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড। একইভাবে মুম্বই-পুণে এক্সপ্রেসওয়ে লিমিটেডও বেসরকারি সংস্থাকে বরাত দেয় টোল সংগ্রহের জন্য। তাদের থেকে টোল বাবদ রাজস্ব আদায় হলেও প্রযোজ্য জিএসটি মেটায়নি ওই দুই সংস্থা। এক্ষেত্রে মোট কর ফাঁকির অঙ্ক ২ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা।

    ডিজিজিআইয়ের কর্তারা জানাচ্ছেন, অনুসন্ধানে কর ফাঁকির তথ্য সামনে আসার পর সরকারি সংস্থাগুলি কিছুটা হলেও বকেয়া মেটানোর উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। পেনাল্টিও দিয়েছে কোনও কোনও সংস্থা। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তদন্তের পর। তা না হলে কেন্দ্র যে কয়েক হাজার কোটি রাজস্ব ক্ষতির মুখে পড়ত, বলাই বাহুল্য।  
  • Link to this news (বর্তমান)