• নভেম্বরে বিমান হামলার খালিস্তানি হুমকি, বিমানে হাইড্রোজেন বোমা? ফোন কলকাতাতেও
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: ১৯৯৯ সালের কান্দাহার বিমান হাইজ্যাকিংয়ের ২৫ বছর পূর্তি আগামী ডিসেম্বরেই। ঠিক তার আগে সেই ঘটনার স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে নতুন আশঙ্কা। বিগত এক সপ্তাহ ধরেই লাগাতার আসছে উড়ো ফোন। কখনও বলা হচ্ছে, বিমান উড়িয়ে দেওয়া হবে। কখনও আবার হাইজ্যাক করার হুমকি। তবে এবার উড়ো ফোন নয়, আতঙ্ক ছড়াতে সরাসরি ময়দানে খালিস্তানি জঙ্গি নেতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুন। শিখবিরোধী সংঘর্ষের ৪০ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে সোমবার তাঁর হুঁশিয়ারি—‘আগামী নভেম্বর মাসের ১ থেকে ১৯ তারিখের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে উঠবেন না। কারণ ওই সময়কালে কোনও একটি উড়ানে হামলা চালানো হবে।’ আর এই হুঁশিয়ারির পরই তোলপাড় শুরু হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। নিষিদ্ধ সংগঠন শিখস ফর জাস্টিস (এসএফজে)-এর প্রতিষ্ঠাতা পান্নুন। আমেরিকা ও কানাডার দ্বৈত নাগরিক এদিন একটি বার্তায় এই হুমকি দিয়েছেন। ১৯৮৪ সালের শিখবিরোধী সংঘর্ষের বর্ষপূর্তিতে এমন হুমকি গত বছরও দিয়েছিলেন পান্নুন।

    এছাড়াও গত পাঁচদিনে ১০০টি বিমান সম্পর্কে উড়ো ফোন এসেছে। যদিও সোমবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে কলকাতা বিমানবন্দরে যে হুমকি আসে, তা সাংঘাতিক। ‘XXXXXXX৮১৫’ মোবাইল নম্বর থেকে দু’বার ফোন এসেছিল। প্রথমে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়, ‘পৃথিবীর মাফিয়া ডন কে জানেন? আকাশের যত বিমান সব হাইজ্যাক হবে।’ বিমানবন্দরে কর্তব্যরত আধিকারিক জানতে চান, ‘আপনি কে? কোথা থেকে বলছেন? কী উদ্দেশ্য আপনার?’ কিন্তু প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই কেটে যায় ফোন। ঠিক চার মিনিট পর ওই একই নম্বর থেকে আবার হুমকি—‘বিমানে হাইড্রোজেন বোমা রাখা আছে। সব উড়িয়ে দেওয়া হবে।’ সঙ্গে সঙ্গে গোটা বিমানবন্দরে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়। সতর্ক করে দেওয়া হয় সমস্ত এয়ারলাইন্সগুলিকে। তবে এক ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালিয়েও শেষপর্যন্ত কোনও বোমার অস্তিত্ব মেলেনি। হুমকি ফোন নিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে। জানা গিয়েছে, ওই মোবাইল নম্বরটি উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা প্রশান্ত বিশ্বাস। চলতি বছরের ২০ মে এবং ৩ অক্টোবরও এই নম্বর থেকে হুমকি ফোন এসেছিল। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে বিধাননগর পুলিস কমিশনারেট।

    খালিস্তানি জঙ্গিদের বিমান হামলাও নতুন নয়। শিখবিরোধী সংঘর্ষের ‘বদলা’ হিসেবে পরের বছরই কানাডাগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ‘কণিষ্ক’ বিমানে মাঝ আকাশেই বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। মারা যান তিনশোরও বেশি যাত্রী। তাই আরও সতর্ক নয়াদিল্লি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাইবার ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স জানতে পেরেছে, এই উড়ো ফোনগুলির সিংহভাগ এসেছে ইউরোপ, দুবাই এমনকী প্রতিবেশী দুই দেশ থেকে। গোয়েন্দাদের রিপোর্ট, ‘১৯৯৯ সালে কাঠমাণ্ডু থেকে দিল্লি আসা ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান আইসি ৮১৪ হাইজ্যাক হওয়ার ২৫ বছর পূর্তি সামনেই। তার আগে আবারও ভারতের কোনও বিমান হাইজ্যাকিংয়ের প্ল্যান করা হচ্ছে।’ এদিন বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা। অসামরিক পরিবহণ মন্ত্রকে বৈঠক করেছেন স্বয়ং মন্ত্রী রামমোহন নাইডু। বৈঠকের পর তিনি বলেছেন, সর্বাগ্রে এয়ারপোর্ট সিকিওরিটি রুলসের পরিবর্তন করা হবে। বিমানের অভ্যন্তরে এয়ার ক্রুদের সঙ্গে ব্যবহার, সন্দেহজনক আচরণ এবং যে কোনওরকম বিধিভঙ্গকে আইনের আওতায় আনতে চলেছে সরকার। এজন্য একাধিক আইনে সংশোধন আনা হবে।  ফাইল চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)