• চলন্ত ট্রেনে ছবি তুলে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি তরুণীকে, শিয়ালদহ স্টেশনে ফেলে মার প্রতিবাদী বন্ধুকে
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘সব অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেব।’ শিয়ালদহগামী চলন্ত ট্রেনে রবিবার রাতে তরুণীকে লক্ষ্য করে এই মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে তিন যুবকের বিরুদ্ধে। ট্রেন শিয়ালদহ পৌঁছনোর পরও তরুণীকে হেনস্তা করে অভিযুক্তরা। তরুণীর বয়ফ্রেন্ড তার প্রতিবাদ করলে তাঁকে প্ল্যাটফর্মে ফেলে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। কর্তব্যরত রেল পুলিসের কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করেন। এমনকী জিআরপিতে গিয়েও বেপরোয়া ওই তিন যুবক তাঁদের ভয় দেখায় বলে অভিযোগ। তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে শ্লীলতাহানি, মারধর সহ একাধিক ধারায় কেস রুজু করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে রেল পুলিস। ধৃতরা হল শিবনাথ পুলে, সৌমেন মিস্ত্রি ও সুমিত হাজরা। পাশাপাশি, এই ঘটনায় ট্রেনে নারী সুরক্ষা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

    রেল পুলিস সূত্রে খবর, নির্যাতিতা ওই তরুণীর বাড়ি নারকেলডাঙা এলাকায়। তিনি একটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার। বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ট্রেনে বাড়ি ফেরার সময় এই ঘটনা ঘটে। 

    অভিযোগকারিণী ওই তরুণী জানিয়েছেন, রবিবার তিনি ঢাকুরিয়ায় বয়ফ্রেন্ডের বাড়িতে গিয়েছিলেন। অন্য বন্ধুদের সঙ্গে তাঁরা বেরিয়েছিলেন। একটু রাত হওয়ায় তাঁকে বাড়িতে ছাড়তে আসছিলেন ওই বন্ধু। রাত সোয়া ন’টা নাগাদ তাঁরা ঢাকুরিয়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরেন। ট্রেন মোটামুটি ফাঁকা ছিল। তিনি বয়ফ্রেন্ডের কাঁধে মাথা রেখে বসেছিলেন। পার্ক সার্কাস থেকে তিন যুবক ওঠে তাঁদের কামরায়। আচমকাই একজন মোবাইল বের করে। তাঁকে লক্ষ্য করে অশ্লীল মন্তব্য করতে থাকে। আচমকাই একজন বলে বসে তরুণীর ছবি সব অ্যাঙ্গেল থেকে তুলে ভাইরাল করে দেবে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তখনই বুঝতে পারবে কী ঘটেছে। ট্রেন ন’টা ৩৫ মিনিটে শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছয়। তখনও তাঁদের লক্ষ্য করে এই তিনজন বিভিন্ন ধরনের কুৎসিত মন্তব্য করতে থাকে বলে অভিযোগ। এরপর তাঁদের পিছু নেয় তারা। তরুণী রুখে দাঁড়িয়ে এক যুবককে থাপ্পড় মারেন। এতে ওই যুবকের সহযোগীরা তাঁকে হেনস্তা করতে শুরু করে বলে জানা গিয়েছে। এই সময় তার প্রতিবাদ করেন তরুণীর বয়ফ্রেন্ড। তখনই তাঁকে ঘিরে ধরে ওই তিন যুবক। প্ল্যাটফর্মে ফেলে তাঁকে মারতে শুরু করে অভিযুক্তরা। অন্য যাত্রীরা ঘটনাটি দেখেও কেউ এগিয়ে আসেননি বলে জানা যাচ্ছে। সকলেই না দেখার ভান করে উদাসীন হয়ে চলে যান। একজনকেও প্রতিবাদী হতে দেখা যায়নি। ওই যুবককে মার খেতে দেখে সেখানে কর্তব্যরত রেল পুলিসের কমীরা তাঁকে উদ্ধার করেন। সকলকে নিয়ে আসা হয় শিয়ালদহ রেল পুলিসের থানায়। 

    এরপর হেনস্তার শিকার হওয়া ওই তরুণী তাঁর বাবাকে ফোন করে সমস্ত ঘটনার কথা জানালে তিনি হাজির হন স্টেশনে। ওই তরুণীর বাবা দাবি করেছেন, রেল পুলিসের থানার মধ্যে মেয়ে ও তাঁর সঙ্গীকে রীতিমতো ভয় দেখাচ্ছিল ওই তিন যুবক। তারা বলতে থাকে, ‘কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে এটা তোরা এখনও বুঝতে পারছিস না। আমরা ছাড়া পেলেই বদলা নেব।’ তাঁরা এর প্রতিবাদ করলে থানায় কর্তব্যরত অফিসার তাঁদেরই লকআপে পুরে দেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতার বাবা। যদিও রেল পুলিস দাবি করেছে, এমন কোনও ধরনের হুমকি দেওয়া বা দুর্ব্যবহার অভিযোগকারী পরিবারের সঙ্গে পুলিসের তরফে করা হয়নি। তাঁদের অভিযোগ পেয়েই জামিন অযোগ্য ধারায় কেস রুজু করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্তরা এর আগে কোনও অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)