এই সময়: বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া নাবালিকাকে উদ্ধার করে পুলিশ পাঠিয়েছিল হাওড়ার লিলুয়ায়, সরকারি হোমে। অভিযোগ, সেই সরকারি হোমে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) এক আধিকারিক অন্তঃসত্ত্বাকে এই মর্মে মুচলেকা লেখার জন্য চাপ দেন যে, সন্তান হলে তাকে হোমে রেখে যেতে হবে। সেই অভিযোগ নিয়ে নাবালিকার পরিবার মামলা করে হাইকোর্টে। বিচারপতি জানিয়ে দেন, সদ্যোজাতকে তাদের কাছে দিয়ে যেতে বলার কোনও এক্তিয়ার হোমের নেই।এর পরেই উঠছে নতুন অভিযোগ। হাইকোর্টে মামলা করায় সেই নাবালিকার মা-বাবাকে তাঁদের মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছেন না হোমের দায়িত্বে থাকা সিডব্লিউসির ওই আধিকারিক। উল্টে পুলিশ ডেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বালি থানার পুলিশ নাবালিকার মা-বাবাকে অভিযুক্ত করে সমন পাঠিয়ে তলবও করেছে। যদিও এই হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ইতিমধ্যে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার ও রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে জমা দিয়েছেন আতান্তরে পড়া মা-বাবা।
নাবালিকার পরিবারের আইনজীবী সর্বানন্দ স্যানাল ও সৌম্য বসুরায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘যেখানে নাবালিকা মেয়েকে খুঁজে পেয়ে পরিবারটি স্বস্তি পেলেও তার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে, সেখানে পরিবারটিকেই অভিযুক্ত করে পুলিশের নোটিস পাঠানো বেআইনি। আগামী সপ্তাহে আদালতে আমরা এই নিয়ে ফের অভিযোগ করব। গোটা ঘটনার পিছনে একটি চক্র চলছে বলে আমাদের আশঙ্কা।’
২০২৩-এর শেষে হুগলির ওই নাবালিকা বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করে এক যুবককে। কয়েক মাস পরে গত সেপ্টেম্বরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পরে সে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল বালি থানায় তার বয়স জানালে মেয়েটিকে লিলুয়া হোমে পাঠানো হয়। অভিযোগ, এর পরেই হোমের দায়িত্বে থাকা সিডব্লিউসির এক কর্ত্রী নাবালিকাকে জানান, বাচ্চার জন্ম হলে সদ্যোজাতকে হোমের জিম্মায় রেখে যেতে হবে — এমন মুচলেকায় সই করতে হবে। হাইকোর্টে অভিযোগ দায়েরের পরে হাওড়া চাইল্ড রাইটস কমিশনকে এই বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। সেখানে সিডব্লিউসি নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে। আদালতও জানিয়ে দেয়, এমন দাবি করার কোনও এক্তিয়ার নেই সিডব্লিউসির।
আইনজীবী সৌম্যর বক্তব্য, এর পর থেকেই নাবালিকার সঙ্গে তার মা-বাবাকে আর দেখা করতে দিচ্ছেন না লিলুয়া হোম কর্তৃপক্ষ। এমনকী নাবালিকার মা হাইকোর্টের রায়ের কপি চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে দিতে তাদের অফিসে গেলে তা নিতে অস্বীকার করেন শীর্ষ এক মহিলা আধিকারিক। উল্টে তিনি মামলার তদন্তকারী অফিসারকে ফোন করে কেন বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, তার কৈফিয়ত চান। এর পরেই বালি থানা অভিযুক্ত হিসেবে নোটিস পাঠায় মা-বাবাকে।
হাওড়া সিডব্লিউসির চেয়ারপার্সন চন্দ্রিমা চক্রবর্তী প্রথম অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘যে বাচ্চার এখনও জন্মই হলো না, তাকে দিয়ে যাওয়ার জন্য মুচলেকা দিতে বলব, এটা মনে হয়? আমি এমন কোনও কথাই বলিনি।’ তবে নাবালিকার পরিবারকে গ্রেপ্তারির হুঁশিয়ারি সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘মা-বাবা হাইকোর্টে গেলেও নাবালিকার বিয়ের কথা স্বীকার করার পরে সেই ঘটনার দায় তাঁদের উপরে বর্তায়। কেন তাঁরা গ্রেপ্তার হবেন না?’