এই সময়: দেড় দশক বাদে কি একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে? বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে চলা 'তীব্র ঘূর্ণিঝড়' 'দানা'র সম্ভাব্য শক্তি ও গতিপথ আগাম আঁচ করে এমনটাই অনুমান আবহবিদদের।২০০৯-এ সুন্দরবন তছনছ করে দিয়েছিল আর এক 'তীব্র ঘূর্ণিঝড়' 'আয়লা'। সোমবার পর্যন্ত আবহবিদদের ধারণা, তার সমতুল গতি নিয়েই বাংলা-ওডিশা উপকূল লক্ষ্য করে এগিয়ে আসবে 'দানা'। আবহবিদদের অনুমান, ল্যান্ডফলের সময়ে 'দানা' নিজের অক্ষের চার দিকে সে দিনের 'আয়লা'র মতোই ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ঘুরতে থাকবে। অর্থাৎ 'আয়লা'র মতো 'দানা'র ক্ষেত্রেও ঝড়ের গতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটারে পৌঁছতে পারে।
এখনও পর্যন্ত মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, 'দানা'র ল্যান্ডফলের সম্ভাব্য সময় ২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর ভোরের মধ্যে। ল্যান্ডফলের সম্ভাব্য এলাকা পুরী থেকে সাগরদ্বীপের মাঝের কোনও জায়গা। এই কারণে ঘূর্ণিঝড়ের জেরে সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা এখনও রয়েছে পুরোমাত্রায়।
দু'দিন পরই বাংলা ও ওডিশা উপকূল যে 'তীব্র ঘূর্ণিঝড়'-এর মুখে পড়তে চলেছে, সোমবার রাত পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে তার জন্মই হয়নি। এ দিন সকালে মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার আঞ্চলিক অধিকর্তা সোমনাথ দত্ত বলেন, 'আন্দামান সাগরে যে নিম্নচাপটি জন্ম নিয়েছিল, সেই নিম্নচাপ সোমবার বেলা ১১টা ৩০ নাগাদ শক্তি বাড়িয়ে 'সুস্পষ্ট নিম্নচাপ'-এ পরিণত হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার সকালে তা আরও শক্তি বাড়িয়ে 'গভীর নিম্নচাপ'-এ পরিণত হবে। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওই গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড় 'দানা'-র রূপ নেবে।'
এর পর ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্রের উপর দিয়ে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে এগোতে শুরু করবে। সমুদ্রের উপর দিয়ে ওই পথে কয়েকশো কিলোমিটার এগোলেই 'দানা'-র সামনে পড়বে ওডিশা ও বাংলার প্রাকৃতিক ভাবে পুরোপুরি অরক্ষিত উপকূল। 'অরক্ষিত', কারণ ওই অঞ্চলের তটরেখাকে সরাসরি ঘূর্ণিঝড়ের ঝাপটা থেকে রক্ষা করার মতো কোনও প্রাকৃতিক বাধাই নেই।
'দানা'-র ল্যান্ডফল প্রসঙ্গে সোমবার সকালে সোমনাথবাবু বলেন, 'আপাতত আন্দামান সাগরের ওই ওয়েদার সিস্টেমের যা পরিস্থিতি, তার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি, ২৪ অক্টোবর রাত থেকে শুরু করে ২৫ অক্টোবর ভোরের মধ্যে কোনও সময়ে 'দানা' ল্যান্ডফল করবে। পুরী থেকে সাগরদ্বীপের মধ্যে কোনও জায়গায় এই ল্যান্ডফল হবে।' বুধবার সমুদ্রে 'দানা' জন্ম নেওয়ার পর তার অগ্রগতির গতিপথ খতিয়ে দেখে ল্যান্ডফলের স্থান এবং সময় নিশ্চিত ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হবে। তবে আবহবিদদের অস্বস্তিতে রেখেছে দু'টি বিষয়।
প্রথমত, দীর্ঘ সমুদ্রপথ। আবহবিদরা জানাচ্ছেন, ঘূর্ণিঝড় তার শক্তি সঞ্চয় করে সমুদ্র থেকে। সমুদ্রের উপর দিয়ে ঝড় যত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে, সে তত বেশি পরিমাণ জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে শক্তি বাড়াতে থাকে। 'দানা'-র ক্ষেত্রে এই পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০০ কিলোমিটার। সুতরাং, প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহের সুযোগ থাকছে।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি আবহবিদদের চিন্তায় রেখেছে, সেটি দুর্বল উত্তর-পশ্চিমা বাতাস। বর্ষা দেশ থেকে সদ্য বিদায় নেওয়ার পর এখনও উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে ঠান্ডা এবং শুকনো বাতাস সে ভাবে দেশে ঢুকতে শুরু করেনি। ওই বাতাস যথেষ্ট শক্তিশালী থাকলে ঘূর্ণিঝড় তার যাত্রাপথের বাঁ দিক থেকে ঢুকে আসা বাতাসের চাপে অনেকটাই সরে বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের দিক দিয়ে চলে যেতে পারত। কিন্তু, প্রবল ঠান্ডা বাতাসের অনুপস্থিতির জন্যই 'দানা' সরাসরি বাংলা ও ওডিশা উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার পথে কোনও বাধা পাবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, 'দানা' ২৪ অক্টোবর রাতে ল্যান্ডফল করলেও তার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ২৩ অক্টোবর, বুধবার থেকেই বৃষ্টি শুরু হবে। এ দিন পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টি (৭-১১ সেন্টিমিটার) শুরু হবে। ২৪ অক্টোবর পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় 'অতিভারী' বৃষ্টি (৭ থেকে ২০ সেমি) এবং কোথাও কোথাও 'চরম ভারী' বৃষ্টির (২০ সেমির বেশি) সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।
ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা এবং ঝাড়গ্রামে। ২৫ অক্টোবরও পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় 'চরম ভারী' এবং 'অতি ভারী' বৃষ্টির সতর্কবার্তা জারি করেছে হাওয়া অফিস। সমুদ্র অশান্ত থাকবে বলে ২৩ তারিখ থেকেই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।