থ্রেট কালচারের অভিযোগ, বিক্ষোভে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজে তালা
এই সময় | ২২ অক্টোবর ২০২৪
এই সময়, ডায়মন্ড হারবার: দুর্নীতি এবং প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে ‘থ্রেট কালচারের’ অভিযোগ তুলে প্রশাসনিক ভবনের মূল গেটে তালা লাগিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে বসলেন ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারি পড়ুয়া, নার্সিং পড়ুয়া ও কর্মচারীরা। ১২ দফা দাবিতে সোমবার বেলা সাড়ে ৯টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের গেটের সামনে ওই অবস্থানের জেরে অচলবস্থা তৈরি হয়েছে হাসপাতালে। ইমার্জেন্সি চালু থাকলেও বন্ধ ওপিডি পরিষেবা। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগী এবং রোগীর আত্মীয়দের। যদিও পাল্টা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘হুমকি সিন্ডিকেট’ চালানোর অভিযোগ এনেছেন অধ্যক্ষ উৎপল দাঁ।বিক্ষোভকারী চিকিৎসক পড়ুয়া সুমন মণ্ডল এবং সৌম্যজিৎ বণিক বলেন, ‘কলেজে নির্মীয়মাণ মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে। তদন্তে না ডেকেই ছাত্রছাত্রীদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। কয়েক মাস আগে হাসপাতালের কোয়ার্টার থেকে উদ্ধার ডাক্তার কল্যাণাশিস ঘোষের সুইসাইড নোটে প্রিন্সিপালের নাম থাকা সত্ত্বেও তদন্ত হলো না কেন?’ হাসপাতালের কর্মচারীরাও বিক্ষোভকারী চিকিৎসক পড়ুয়াদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে এ দিন কর্মবিরতির ডাক দেন।
যদিও প্রিন্সিপাল উৎপল দাঁ সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, ‘এই আন্দোলনে মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক পড়ুয়াদের বড় অংশ যোগ দেয়নি। কয়েকজন মিলে পরিকল্পনামাফিক এইসব কাণ্ড ঘটিয়েছে। পুজোর আগে কয়েকজনের বিরুদ্ধে চিকিৎসক পড়ুয়াদের বড় অংশ আমাদের কাছে অভিযোগ জানায়। এরা কলেজে থ্রেট কালচার ও ইউনিভার্সিটির প্রশ্ন ফাঁসে যুক্ত। আমরা তদন্ত করে দেখি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ আছে। এদের মূল পান্ডা সুমন মণ্ডল এবং সৌম্যজিৎ বণিক। আমরা কলেজ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে এদের হস্টেল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিই। সোমবার পর্যন্ত ডেডলাইন ছিল হস্টেল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার। সেই জন্য ওরা একটা ইস্যু করে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করছে।’
পরিস্থিতি দেখে বেলা এগারোটা নাগাদ হাসপাতালের তালা খুলতে এমএসভিপি তন্ময় পাঁজা ডায়মন্ড হারবার থানার আইসি ও ডায়মন্ড হারবার মহিলা থানার ওসিকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। কথা বলেন অবস্থান বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে। কিন্তু তাঁরা দাবিতে অনড় থাকায় তালা খোলা যায়নি। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্মকর্তাদেরও।
আরজি করের ঘটনায় বিচারের দাবিতে হাসপাতালের আন্দোলনরত চিকিৎসক পড়ুয়ারাও জড়ো হন প্রশাসনিক ভবনের সামনে। তাঁরা প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দেন। অনশনরত চিকিৎসক পড়ুয়া সাগ্নিক মিদ্দা এবং সঞ্চিয়তা মণ্ডল বলেন, ‘আজ যারা প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন তাঁরাই আসলে এই থ্রেট কালচারের সঙ্গে যুক্ত। এরাই তো মহিলা হোস্টেলে ঢুকে তালা দিয়ে বাইরে থেকে ছেলে এনে গন্ডগোল পাকিয়েছিল।’
বেলা একটা নাগাদ মহকুমা শাসককে নিয়ে বিক্ষোভস্থলে আসেন ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। দু’পক্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য খুব শীঘ্রই বৈঠক করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়ার পর প্রশাসনিক ভবনের গেটের তালা খুলে দেওয়া হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ আটজন ছাত্রকে হস্টেল থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ করে স্থগিত করে দেন।