এই সময়: অতিবর্ষণে পুজোর আগে প্লাবিত হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেই ধাক্কা সামলে উঠতে না-উঠতে ফের দুর্যোগের ভ্রুকুটি বাংলায়— ঘূর্ণিঝড় 'দানা'। ল্যান্ডফল যেখানেই হোক, তার প্রভাবে বাংলায়, বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। আর সে কথা মাথায় রেখেই আগেভাগে ত্রাণ এবং উদ্ধারের জন্য পুরোদস্তুর প্রস্তুত থাকছে প্রশাসন। এর মধ্যেই আগাম সতর্কতা হিসেবে সোমবার পাঞ্চেত, মাইথন ও দুর্গাপুর জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে ডিভিসি।তাদের দাবি, এ ব্যাপারে বাংলা এবং ঝাড়খণ্ড সরকারকে জানানো হয়েছে। দুই বাঁধের নিম্ন অববাহিকা এলাকায় জারি হয়েছে কমলা সতর্কতা। 'দানা' নিয়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে নবান্ন। দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং ঝাড়গ্রামকে সতর্ক করা হয়েছে বিশেষ ভাবে। এ দিন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব টিভি সোমনাথন বাংলা, ওডিশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যসচিবদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজখবর করেন।
সন্ধেয় রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানান, এখন থেকেই উপকূলবর্তী এলাকার ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখা হচ্ছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার বিকেল থেকে উপকূল লাগোয়া এলাকার মানুষদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয় শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে সন্তানসম্ভবাদের অগ্রাধিকার দিয়ে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আজ থেকেই সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে খুলে যাচ্ছে কন্ট্রোল রুম।
অন্যদিকে ডিভিসি-র আধিকারিকদের ব্যাখ্যা, নিম্নচাপের জন্য আগামী কয়েক দিন দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে জলাধারের জল বাড়বে। তখন হঠাৎ করে যাতে জল ছাড়তে না-হয়, সে জন্য এখন থেকেই জলাধার খালি করা হচ্ছে। ডিভিসি সূত্রের খবর, রবিবার পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধার থেকে প্রায় ৩৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। সোমবার সেটা বাড়িয়ে ৬০ হাজার কিউসেক করা হয়। এ দিন দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ছাড়া হয় ২০ হাজার কিউসেক জল। ভারী বৃষ্টি হলে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়তে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন সংস্থার আধিকারিকরা। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।
নিয়ম মেনে ই-মেল মারফত পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের আধিকারিকদের জল ছাড়ার কথা জানানো হয়েছে বলে দাবি ডিভিসি-র। পুজোর আগে টানা বৃষ্টিতে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে প্রায় ৬ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। তার জেরে হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। ডিভিসি-কে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর দাবি ছিল, রাজ্য সরকারকে না-জানিয়ে ডিভিসি আচমকা জল ছাড়ায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও নালিশ জানিয়েছিলেন তিনি। প্রতিবাদে ডিভিসি ও ডিভিআরআরসি-র বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেন রাজ্যের দুই প্রতিনিধি। মনে করা হচ্ছে, জল ছাড়া নিয়ে যাতে আর নতুন করে জট তৈরি না-হয়, সে জন্যই আগেভাগে জলাধার খালি করার এই উদ্যোগ।
এ দিকে, পুরীতে প্রশাসনের তরফে পর্যটকদের অবিলম্বে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। আগামী ২৫ তারিখ পর্যন্ত যাতে কেউ পুরী না-যান, সেই অনুরোধও করা হয়েছে পর্যটকদের।