এই সময়, বর্ধমান: আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সিবিআই যার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে সেই মূল অভিযুক্ত পেশায় একজন সিভিক ভলান্টিয়ার। এই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের নজর পড়েছে সিভিক বাহিনীর উপরও। দেওয়া হয়েছে একাধিক নির্দেশ। এই আবহে হুগলির বলাগড়ের সিভিক ভলান্টিয়ার হীরালাল সরকারকে রবিবার বর্ধমানে সংবর্ধনা জানানো হলো বর্ধমান সাহিত্য সভার পক্ষ থেকে। কারণ, সিভিক ভলান্টিয়ার ছাড়া তাঁর রয়েছে আর একটি পরিচয়— ‘হীরা মাস্টার’।ট্র্যাফিকের দায়িত্ব সামলে রাস্তার পাশেই পাটকাঠির বেড়া দিয়ে তৈরি একটি চালা ঘরে তিনি পড়ান একদল খুদেকে। পঠনপাঠন শেষে ছোট ছেলেমেয়েদের পৌঁছে দেন স্কুলেও। ২০১১ সাল থেকে সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছেন হুগলির সোমরা-১ পঞ্চায়েতের বলাগড় ব্লকের বাসিন্দা হীরালাল। গত ৪ বছর ধরে তিনি বলাগড় থানার নাটাগড় এলাকায় এসটিকেকে রোডের ট্র্যাফিক বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন।
এলাকায় মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস। খোঁজ নিয়ে হীরালাল জানতে পারেন, এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই খেতমজুরের কাজ করেন। সকালে স্বামী-স্ত্রী সঙ্গে খাবার নিয়ে কাজে চলে যান। তাঁদের সন্তানরা পড়ে থাকে বাড়িতে। বেশিরভাগ দিন স্কুলে যাওয়া হয় না তাদের। কারণ, নজর রাখার মতো ঘরে কেউই থাকে না। তা ছাড়া সন্তানদের জন্য গৃহশিক্ষক রাখার সামর্থ্যও নেই পরিবারগুলির।
এর পরেই বছর খানেক আগে এসটিকেকে রোডের ধারে একটি গাছের ডালে দড়ি বেঁধে পুরোনো ফ্লেক্স লাগিয়ে পাঠাশালা চালু করেন হীরালাল। প্রথমে অনেকেই আসতে চাইত না। পরে লজেন্স, বিস্কুট, পেন্সিল, ইরেজ়ার দিয়ে বন্ধুত্ব করে তাদের পড়াতে শুরু করেন হীরালাল। পরে গ্রামের লোকেদের দেওয়া পাটকাঠি দিয়ে তৈরি হয় চালা ঘর। সেই পাঠশালায় এখন পড়ুয়া সংখ্যা ২২ জন। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা ওখানে নিয়ম করে পড়াশোনা করে। তার পর দল বেঁধে স্কুলে যায়। পড়ানোর ফাঁকে নিজের ডিউটিও করেন হীরালাল।
রবিবার বর্ধমান সাহিত্য সভার সংবর্ধনা মঞ্চে হীরালালকে একটি মানপত্র দিয়ে সম্মান জানান পূর্ব বর্ধমানের প্রজেক্ট অ্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট ওয়েলফেয়ার অফিসার কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল। একইসঙ্গে খুদে পড়ুয়াদের জন্য তিনি হীরালালের হাতে তুলে দেন ২২টি খাতা, পেন্সিল, ইরেজ়ার, বিস্কুট ও লজেন্স। হীরা মাস্টারকে একটি স্মারক দিয়ে সম্মান জানান সাহিত্যিক সৌরভ হাওলাদার। বর্ধমান সাহিত্য সভার পক্ষে মানব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আগামী দিনেও আমরা সবাই ওঁর পাশে থাকব। সহযোগিতা করব।’
হীরালালকে সংবর্ধনার কথা জেনে খুশি বলাগড় থানার ওসি রাজকিরণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘অনেকেই যেটা পারে না সেটা হীরালাল করছেন। আদিবাসী ছেলেমেয়েদের মনে স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ তৈরি করেছেন তিনি।’ হুগলির (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার কামনাশিস সেনের কথায়, ‘ওঁর কাজ আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করুক এটাই চাই।’ যদিও হীরালাল নিজে মনে করেন, ‘আমি চেয়েছি যাতে ওরা ন্যূনতম পড়াশোনা শিখতে পারে। সরকার এখন পড়াশোনার অনেক সুযোগ দিচ্ছে। সে সব যেন ওরা পায় সেই চেষ্টা করব।’