স্টাফ রিপোর্টার: হার্ড ডিস্কে লুকিয়ে রহস্য। হার্ড ডিস্কের ভিতর কয়েকটি বিশেষ ফাইলে রয়েছে এমন কিছু সিসিটিভির ফুটেজ, যেগুলি আর জি কর মামলার ‘ট্রাম্প কার্ড’ হতে পারে, এমনই ধারণা সিবিআইয়ের। তাই আর জি করে মহিলা চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তথ্য এবং প্রমাণ লোপাট, ষড়যন্ত্রের মামলায় অভিযুক্ত হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার আগে ওই হার্ড ডিস্কে থাকা ফুটেজগুলির উপর গুরুত্ব দিচ্ছে সিবিআই। সেই কারণে আদালতের অনুমতি নিয়েই ওই হার্ড ডিস্কগুলি পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে। খুব অল্পদিনের মধ্যেই ওই হার্ড ডিস্কের তথ্য জানতে মরিয়া সিবিআই।
আর জি কর হাসপাতাল ও টালা থানার কয়েকটি সিসিটিভির ফুটেজ ঘিরে সিবিআই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। সুপ্রিম কোর্টেও এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সিবিআইয়ের হাতে সব ফুটেজ এসে পৌঁছয়নি ও যেগুলি এসেছে, সেগুলির মধ্যে অনেকটাই অসমাপ্ত, এমনই অভিযোগ সিবিআইয়ের। সেই ক্ষেত্রে হাসপাতাল ও থানার কয়েকটি কম্পিউটার সিবিআই আধিকারিকরা খতিয়ে দেখেন। সিবিআইয়ের দাবি, কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কে ছিল কিছু সিসিটিভির ফুটেজ।
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের অভিযুক্ত সঞ্জয় রাইয়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করার আগে আর জি কর হাসপাতালের ৫১টি সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেন আধিকারিকরা। তাতেই সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইয়ের যাবতীয় গতিবিধি সিবিআইয়ের নজরে আসে। এই গতিবিধিগুলি সঞ্জয় রাইয়ের বিরুদ্ধে পেশ করা চার্জশিটে সিবিআই উল্লেখ করেছে। সূত্রের খবর, আর জি করের মামলায় তথ্য লোপাটের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রমাণ সিবিআইয়ের হাতে নেই। সেই কারণেই যে ফুটেজগুলি ‘হারিয়ে’ গিয়েছিল বা মুছে ফেলা হয়েছিল বলে সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, এবার সেগুলিই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে সিবিআই।
ইতিমধ্যেই সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলের মোবাইলে বহু কথোপকথন ও মোবাইল থেকে মুছে ফেলা কল রেকর্ড এবং ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করেছে সিবিআই। সেগুলি থেকে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে, এমনই দাবি সিবিআইয়ের। ওই কল রেকর্ড ও ভিডিও ফুটেজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তদন্ত চালাতে সিবিআই আধিকারিকরা বেশ কিছু সিসিটিভির ফুটেজের সন্ধান চালাচ্ছিলেন। সন্দীপ ও অভিজিতের মতো দুই অভিযুক্তর গতিবিধি, এমনকী কার্যকলাপ জানার জন্যও ওই সিসিটিভি ফুটেজগুলির প্রয়োজন ছিল বলে সিবিআইয়ের দাবি। সিবিআই আধিকারিকদের মতে, তাঁরা আর জি কর ও টালা থানার কম্পিউটার ঘেঁটে কয়েকটি ফাইলের সন্ধান পান। ওই ফাইলগুলি পরীক্ষা করার পরই তাঁরা জানতে পারেন যে, সেখানেই ‘লুকিয়ে’ রাখা হয়েছে সিসিটিভির কয়েকটি ‘হারিয়ে’ যাওয়া ফুটেজ।
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, আধিকারিকরা আর ঝুঁকি নিয়ে ফাইলগুলি আলাদা করে সংগ্রহ করেননি। তাঁরা চারটি কম্পিউটার থেকে চারটি হার্ড ডিস্ক খুলে নেন। সেগুলি সংগ্রহ করার পর শিয়ালদহ আদালতে আবেদন করে জানান, সেগুলি কেন্দ্রীয় ফরেনসিকে তাঁরা পরীক্ষার জন্য পাঠাতে চান। আদালত সিবিআইয়ের ওই আবেদন মঞ্জুর করে। ফরেনিসক ল্যাবরেটরি ওই হার্ড ডিস্কের বিষয়ে রিপোর্ট ও তার বৈদ্যুতীন নথি পাঠানোর পর সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে। সেইমতো ওই নথিগুলি মামলার পরবর্তী চার্জশিটে নথিভুক্ত করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সিবিআই।