বিষক্রিয়ায় তপনের স্ত্রীর মৃত্যুর তদন্তে ঝালদায় ফরেন্সিক টিম
বর্তমান | ২৩ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: এবার ঝালদার প্রয়াত কাউন্সিলার পূর্নিমা কান্দুর বাড়িতে এলেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছটা নাগাদ দুর্গাপুরের রিজিওনাল ফরেনসিক সাইন্স ল্যাবরেটরির তিন সদস্য পূর্ণিমার বাড়িতে পৌঁছান। যে ঘর থেকে অচৈতন্য অবস্থায় পূর্নিমার দেহ উদ্ধার হয়েছিল, সেই ঘর তল্লাশি করেন। বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে ছবিও তোলেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।
পূর্নিমার পরিবার ও পুলিসের তরফে জানা গিয়েছে, পূর্ণিমার মৃত্যুর পর থেকে ওই ঘর বন্ধই ছিল। তদন্তের স্বার্থে ঘরটি সিল করে রেখে দিয়েছিল পুলিস। বাড়ির সামনে পুলিস পাহারাও বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। এদিন পুলিসের উপস্থিতিতে সেই ঘরের তালা খোলা হয়। উপস্থিত ছিলেন পূর্ণিমার ছেলে দেব কান্দুও। তারপর সাড়ে সাতটা নাগাদ তাঁরা বেরিয়ে যান। তবে, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ঘর থেকে কোনও কিছু বাজেয়াপ্ত করেননি বলে জানা গিয়েছে। পূর্ণিমা কান্দুর ছেলে দেব বলেন, ফরেনসিক দলের এসেছিলেন।
তবে তাঁরা কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছেন কি না, সেব্যাপারে কিছু জানায়নি। প্রসঙ্গত, গত ১১ অক্টোবর নবমীর রাতে মৃত্যু হয় হল পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভার নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলার তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দুর। পূর্ণিমাও ওই পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার।
স্থানীয় ও পুলিস সূত্রের খবর, ওইদিন রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন পূর্ণিমার দুই ছেলেমেয়ে। বাড়ি ফিরে দেখেন, মা অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এরপরেই প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় ঝালদা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় পূর্ণিমাকে। সেখানেই চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য পূর্ণিমার দেহ পুরুলিয়া দেবেন মাহাত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পুলিস সূত্রের খবর, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে পূর্ণিমার বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর কথা উল্লেখ রয়েছে। তাঁর পাকস্থলীতে বিষাক্ত পদার্থ মিলেছে।
তার নমুনা ভিসেরার জন্য দুর্গাপুরের ওই ল্যাবেই পাঠানো হয়েছে। তবে, পূর্ণিমা আত্মহত্যা করেছেন নাকি তাঁকে খুন করা হয়েছে, সেই নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। পরিবার সূত্রে খবর, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন পূর্ণিমা। মৃত্যুর ১১ দিন আগে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং পুরুলিয়া জেলার পুলিস সুপারকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন পূর্ণিমা। স্বামী তপনের হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে পূর্ণিমা লিখেছিলেন, তাঁর এবং তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে দু’জন নিরাপত্তারক্ষীকে মোতায়েন করেছিল প্রশাসন। কিন্তু পরে তাঁদের কেউই আর নিরাপত্তা দেননি। তাঁর এবং তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার জন্য যে দু’জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের ওই কর্তব্য থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এমতাবস্থায় নিজের নিরাপত্তার জন্য চিন্তিত ছিলেন পূর্ণিমা। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, 'ঝালদার বাড়িতে আমি আমার নাবালক পুত্র এবং কন্যার সঙ্গে থাকি।
পরিবারে কোনও পুরুষ সদস্য নেই। আমি বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়েছি যে, আমার স্বামীর খুনে অভিযুক্তেরা আমাকে এবং আমার পরিবারকে টার্গেট করতে পারে। অভিযুক্তেরা জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর থেকে আমরা ভীত। আমাকে এবং আমার পরিবারকে যদি নিরাপত্তা দেওয়া হয়, তা হলে বাধিত থাকব।'