রামপুরহাট পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুমোরপাড়া। তাঁদের ব্যবসা প্রায় ৫৫ বছরের পুরনো। সেসময় বিহারের ভাগলপুর থেকে রামপুরহাটে এসে খাস জমির উপর ছিঁটেবেড়া ঘর তৈরি করে শিল্পীরা ব্যবসা শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তাঁরা স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বসবাস করছেন। কালীপুজোর আগে প্রদীপ বানানো ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময় মাটির হাঁড়ি, চায়ের কাপ, ফুলের টব তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের দোকানদারেরা চাহিদা মতো অর্ডার দিয়ে যেতেন। কিন্তু সেখানেও থাবা বসিয়েছে প্লাস্টিক কন্টেনার, কাগজের চায়ের কাপ, প্লাস্টিকের ফুলের টব।
মাটির প্রদীপ ও অন্যান্য সামগ্রীর কদর কমতে থাকায় এই কাজ ছেড়ে অনেকেই অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন। বংশ পরম্পরায় দইয়ের ভাঁড়, চায়ের ভাঁড়, তৈরি করে আসছেন সঞ্জয় পণ্ডিত। কালীপুজোর আগে মাটির প্রদীপ তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। তিনি বললেন, দিন দিন মাটির তৈরি জিনিসের চাহিদা কমে যাচ্ছে। আগে দীপাবলির জন্য মাটির প্রদীপের প্রচুর চাহিদা ছিল। কিন্তু এখন তা আর নেই। এদিকে পুজোর আর কয়েকদিন বাকি। এখনও পর্যন্ত সেভাবে অর্ডার আসেনি। তিনি জানান, বৈধরার ব্রাহ্মনী নদী থেকে ট্রাক্টর পিছু মাটি আনতে খরচ পড়ে ২৫০০ টাকা। আগে সেটাই ছিল ১৮০০-২০০০ টাকা। ডিজেলের দাম বাড়ায় ভাড়া বেড়েছে। তার উপরে জ্বালানির দামও বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বাজারে সেই হারে প্রদীপের দাম মিলছে না। ছোট প্রদীপ ১০০ টির দাম ৬০ ও বড় প্রদীপ ১২০ টাকা। সেই তুলনায় বৈদ্যুতিক প্রদীপ ও মোমবাতি সস্তা। তবে পুরসভা থেকে প্লাস্টিক বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ায় মাটির চায়ের ভাঁড়ের কিছুটা চাহিদা বেড়েছে।
নীতেশ পণ্ডিত নামে এক মৃৎশিল্পী জানান, এই শিল্পই দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ছিল। কিন্তু বর্তমানে মাটির জিনিস বিক্রি করে সংসার চালানো যাচ্ছে না। সীতারাম পণ্ডিত নামে এক মৃৎশিল্পী বলেন, একটা সময় মাটির প্রদীপের এত চাহিদা ছিল যে, কালীপুজোর আগে নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকত না। এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। গত কয়েক বছর ধরে মাটির জিনিসের বিক্রিবাট্টা তলানিতে ঠেকেছে।
গৃহবধূ অঞ্জনা সরকার বলেন, সরষের তেলের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে খুব অল্প তেলে রান্না করতে হচ্ছে। তার উপরে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে মহার্ঘ তেলের ব্যবহার কী করে করব বলুন।
শিল্পীদের অনেকেই বলেন, সরকার এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে উদ্যোগ নিলে ভাল হয়। তাহলে উৎপাদন বাড়িয়ে মহাজনের মাধ্যমে ভিনরাজ্যে প্রদীপ পাঠালে তুলনামূলকভাবে দাম অনেকটাই বেশি পাওয়া যাবে। তাঁরা চান, ফের গৃহস্থের পছন্দের তালিকায় উঠে আসুক মাটির প্রদীপ। • তৈরি হচ্ছে মাটির প্রদীপ। -নিজস্ব চিত্র