নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র আতঙ্কে ত্রস্ত বাংলা। উপকূলে কখন কীভাবে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। ভারী বৃষ্টিরও আশঙ্কা রয়েছে কিছু জায়গায়। তখনই ড্যাম থেকে জল ছাড়া বাড়াল ডিভিসি। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার মাইথন থেকে ১৫হাজার কিউসেক হারে ও পাঞ্চেত থেকে ৩০হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। ডিভিসি কর্তৃপক্ষের দাবি, ডানার প্রভাবের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত। আগে থেকেই মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার খালি করা হচ্ছে। যাতে বিপর্যয়ের সময়ে বাড়তি জল ধরে রাখা যায়। মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে জল ছাড়া শুরু হওয়ায় জল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে দুর্গাপুর ব্যারেজও। দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে মঙ্গলবার দুপুরে ৪৫ হাজার ৯০০ কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। এই বাড়তি জল দুর্যোগের মুখে নতুন করে কোনও সমস্যা সৃষ্টি করে কি না সেটাই দেখার।
ডানা ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা হিসেবে ইতিমধ্যেই উপকূলের জেলাগুলিতে সবরকম সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। দীঘা-মন্দারমণি সহ উপকূল থেকে পর্যটকদের সরানো হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পশ্চিম বর্ধমান জেলায় পড়ার পূর্বাভাস দেয়নি আবহাওয়া দপ্তর। যদিও পশ্চিম বর্ধমান জেলা সংলগ্ন মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার বাংলার দুর্ভোগ বাড়ায়। বিশেষ করে ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টিপাত হলেই দুই বাঁধ থেকে ছাড়া বিপুল জল বাংলার বিস্তীর্ণ অংশকে ভাসিয়ে দেয়। এবার তাই আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছে ডিভিসি। তাদের দাবি, মাইথন ও পাঞ্চেতের জলস্তর নামানোর জন্য জল ছাড়া হচ্ছে। এতে বিপর্যয়ের সময়ে বাড়তি জল ধরে রাখতে পারবে বাঁধগুলি। জানা গিয়েছে, মাইথন জলাধারে এখন জলস্তর রয়েছে ৪৮৬ ফুট। বাঁধের সর্বোচ্চ জলধারণ ক্ষমতা রয়েছে ৪৯৫ ফুট। অন্যদিকে পাঞ্চেতের জলস্তর রয়েছে ৪১৩ ফুট যার সর্বোচ্চ জলধারণ ক্ষমতা রয়েছে ৪২৫ ফুট। ডিভিসির এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অঞ্জনীকুমার দুবে বলেন, বাড়তি জল ছেড়ে রাখা হচ্ছে। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের ফলে দামোদরের উচ্চ অববাহিকায় বাড়তি বৃষ্টিপাত হলে তা যেন ধরে রাখা যায়।
গতবার ঘূর্ণিঝড়ের জেরে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। ভেসে গিয়েছিল অণ্ডাল বিমান বন্দর। তিনদিন বিমান পরিষেবা বন্ধ ছিল। যদিও এনিয়ে বাড়তি গুরুত্ব দিতে নারাজ অণ্ডাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিমান বন্দরের অধিকর্তা কৈলাস মণ্ডল বলেন, আমাদের এখানে এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই। তাই বাড়তি কোনও সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে না। গতবারেরটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ কোথায় ল্যান্ডফল করবে তার উপরই গতিপথ বা ভারী বৃষ্টি অনেকটাই নির্ভর করবে। ল্যান্ডফলের পর শক্তি বেড়ে ওড়িশা হয়ে ঝাড়খণ্ড অভিমুখে গেলে ব্যাপক বৃষ্টি ও দুর্যোগের আশঙ্কা থাকতে পারে। সেকারণে আগাম পদক্ষেপ হিসেবে জলাধার থেকে জল ছাড়া হচ্ছে।