• পোড়ানো হয়েছিল চাকপাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সরকারি ওষুধই
    বর্তমান | ২৩ অক্টোবর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: রামপুরহাটের চাকপাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সরকারি বরাদ্দ ওষুধই জাতীয় সড়কের ধারে পোড়ানো হয়েছিল। স্বাস্থ্যকর্তাদের তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দপ্তরের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করছে রামপুরহাট স্বাস্থ্য঩জেলা। এদিকে গরিবদের জন্য বরাদ্দ ওষুধ পোড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। 

    গত শনিবার সকালে ১৪নম্বর জাতীয় সড়কে রামপুরহাটের তেনেচোরা কাঁদরের ধারে প্রচুর ওষুধ পোড়ানো অবস্থায় দেখেন স্থানীয় মানুষজন। যার মধ্যে কিছু ওষুধ আধপোড়া অবস্থায় ছিল। তাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নামে সিল, ছাপ ছিল। অধিকাংশ ওষুধের এক্সপায়ারি ডেট লেখা ছিল ২০২৫ সালের মার্চ মাস। স্বভাবতই ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনায় এলাকার পাশাপাশি রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলার অন্দরে তীব্র আলোড়ন পড়ে। কাছাকাছি একমাত্র চাকপাড়া সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। ওইদিন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র অবশ্য ওষুধগুলি তাদের নয় বলে দাবি করে। রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে তদন্তে আসেন রামপুরহাটের সিএমওএইচ শোভন দে, ডেপুটি সিএমওএইচ-১ অমিতাভ সাহা ও ব্লক স্বাস্থ্যদপ্তরের টিম। তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে বেশকিছু আধপোড়া ওষুধ ও নথি সংগ্রহ করেন। সেগুলি ভালোভাবে খতিয়ে দেখে তাঁরা নিশ্চিত হন, ওষুধগুলি চাকপাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বরাদ্দ করা হয়েছিল। এরপরই তাঁরা চাকপাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তদন্তে আসেন। মজুত ওষুধের স্টক খতিয়ে দেখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে স্বাস্থ্যকর্তাদের ‘ভুল’ হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওষুধের দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি হেলফ অফিসার ইন্দুলেখা কোনাই। ডেপুটি সিএমওইচ-১ বলেন, ওষুধগুলি সরকারি এবং চাকপাড়া স্টোর থেকেই বেরিয়েছে সেব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এরমধ্যে কেউ আমাদের ওষুধ চুরির ব্যাপারে রিপোর্ট করেনি। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া বা মেয়াদ পেরনোর কাছাকাছি আসা ওষুধগুলি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ব্লক হাসপাতালে ফেরত পাঠানোর কথা। ফলে তা না করে পুড়িয়ে দেওয়া অনুচিত। 

    স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, গরিব মানুষজন যাতে বিনা পয়সায় চিকিৎসা ও ওষুধপত্র পান সেটা নিশ্চিত করে চলেছে সরকার। আর এই ওষুধ টাকা দিয়েই কিনতে হয়েছে। ফলে এক্ষেত্রে চূড়ান্ত গাফিলতি হয়েছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া হলে ইন্দুলেখা বলেন, দু’মাস আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিষ্কার করে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধপত্র এক টোটোচালকের মাধ্যমে ব্লক হাসপাতালে ফেরত পাঠিয়েছিলাম। এর মাঝে কী হয়েছে বুঝতে পারছি না। গাফিলতির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, সরকারি জিনিস অপরিচিত টোটোচালকের হাত দিয়ে ফেরত পাঠানো এবং পরবর্তীতে সেটা ব্লক হাসপাতালে পৌঁছল কিনা সেব্যাপারে খোঁজ না নেওয়া আমার ‘ভুল’ হয়েছে। তিনি ওই টোটো চালককে দেখলেও চিনতে পারবেন না বলে জানান। পাশাপাশি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও নিরাপত্তা নেই বলেও দাবি করেন তিনি। 

    সিএমওএইচ বলেন, এই ওষুধগুলি ফেরত না পাঠিয়ে পোড়ানোর পিছনে নিশ্চয়ই একটা উদ্দেশ্য আছে। আমরা তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করছি। সেটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেব। এরপর তাঁরা যা নির্দেশ দেবেন সেইমতো আইনি পদক্ষেপ করা হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)