সংবাদদাতা, পতিরাম: বালুরঘাটের পাগলিগঞ্জ যেন বালি পাচারের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। প্রকাশ্যে নদীর বুকে নৌকা ও ট্রাক্টর নামিয়ে দেদার চলছে পাচার। প্রশাসনের অভিযানে বালুরঘাটের অন্যান্য জায়গায় কিছুটা লাগাম পরানো গেলেও পাগলিগঞ্জে বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে চলছে পাচারকারীরা। প্রশাসন অভিযান চালালে কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে, এলাকা ছাড়লেই ফের একই ছবি।
প্রশাসনের দাবি, বালুরঘাটের অনেক জায়গাতেই অভিযান চলছে। পাগলিগঞ্জেও ফের বড় অভিযান করা হবে। দক্ষিণ দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও রাজস্ব) হারিস রাসিদ বলেন, সব জায়গাতেই অভিযান চলছে। পাগলিগঞ্জে দু’দিন বেশকিছু ট্রাক্টর ধরা হয়েছিল।
স্থানীয় বোয়ালদার গ্রাম পঞ্চায়েতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বালি পাচার। পঞ্চায়েতের প্রধান দীপক মাহাতো বলেন, এটা নিয়ে আমরা একাধিকবার প্রশাসনকে জানিয়েছি। এখানে পুরোপুরি বালি তোলা বন্ধ হোক। তা না হলে সরকারি রাজস্ব দিয়েই বালি তোলার ব্যবস্থা করা উচিত।
তবে পাগলিগঞ্জের বালি পাচার নিয়ে বিরোধীরা একযোগে প্রশাসন ও শাসক দলকেই আক্রমণ করেছে। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার বলেন, পাগলিগঞ্জে বালি মাফিয়াদের পিছনে তৃণমূলের হাত রয়েছে। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের কাছে এই কাটমানি যায়। তাই ওই জায়গায় বালি পাচার বন্ধ হয় না।
পালটা তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি সুভাষ চাকীর মন্তব্য, এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। বিরোধীরা প্রমাণ দিক আমাদের কেউ যুক্ত কি না। বিজেপিই এই বালি মাফিয়াদের মদত দেয়। আমরাও চাই এই বালি তোলার কাজ বন্ধ হোক। আমাদের জনপ্রতিনিধিরা প্রশাসনকে বারবার বিষয়টি জানান।
বালুরঘাট ব্লকের পাগলিগঞ্জ ব্রিজের দু’দিকেই বালি তোলার কাজ চলে। একদিকে বালুরঘাট, অন্যদিকে পতিরাম থানা। বর্ষাকালে নদীর জল বেশি থাকায় বালির বদলে মাটি তোলার দিকে নজর দিয়েছিল মাফিয়ারা। কিন্তু নদীর জল কমতেই এখন ফের বালির দিকে নজর পড়েছে। দিনে প্রকাশ্যে নদীবক্ষে একাধিক নৌকা নামিয়ে চরে বালি জড়ো করা হচ্ছে। সেখান থেকে ট্রাক্টরে বালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন গোপন ঠিকানায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই বালি তোলার কারবারের সঙ্গে বহু ইনফর্মার যুক্ত। তাদের কাজ হল পুলিস ও প্রশাসনের গাড়ি যাওয়ার আগেই নদীতে থাকা লোকজনকে খবর পৌঁছে দেওয়া। এতে ট্রাক্টর নিয়ে পালাতে সুবিধা হয় কারবারীদের। অভিযান চালালেও প্রশাসনকে ফিরে আসতে হয় খালি হাতে।