দেবী চৌধুরানি মন্দিরে সন্ধ্যার পর প্রতিমা গড়ে ভোরের আলোর আগে হয় বিসর্জন
বর্তমান | ২৩ অক্টোবর ২০২৪
বিষ্ণুপদ রায়, হলদিবাড়ি: হলদিবাড়ি ব্লকের মধ্যে সব থেকে প্রাচীন কালীপুজো কাশিয়াবাড়ির দেবী চৌধুরানি মন্দিরের পুজো। এই পুজোর বিশেষত্ব দেবীপ্রতিমা সূর্যের আলো দেখেন না। পুজোর দিন সূর্য ডোবার পর সন্ধ্যায় কালীপ্রতিমা গড়ার কাজ শেষ হয়। এরপর ভোরের আলো ফোটার আগেই পুজো সেরে জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। বছরের পর বছর এমনই রীতি চলে আসছে হলদিবাড়ি ব্লকের উত্তর বড় হলদিবাড়ি গ্ৰাম পঞ্চায়েতের কাশিয়াবাড়ির দেবী চৌধুরানি কালীমন্দিরের পুজোয়।
কথিত আছে ২৫০ বছরের প্রাচীন এই পুজোর প্রচলন হয়েছিল দেবী চৌধুরানি ও ভবানী পাঠকের হাত ধরে। সেই সময় কালীর থান বা কাঁচা চালাঘরে দেবীর আরাধনা করা হতো। স্থানীয়দের দাবি, পরবর্তীতে কোচবিহারের রাজ আমলে চুন ও সুরকি ব্যবহার করে ইট গেঁথে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ হয়। সেই সময় কোচবিহারের রাজ পরিবারের তত্ত্বাবধানে এই মন্দিরে পুজোর আয়োজন করা হতো বলে জানা গিয়েছে।
এই বিষয়ে মন্দিরের পুরোহিত তারিণীকান্ত রায় জানান, পাঁচ পুরুষ ধরে তাঁরা এই মন্দিরের পুজোর দায়িত্ব পালন করছেন। মন্দিরে একবারই বার্ষিক পুজো হয়। রাতে দেবীর মূর্তি বসিয়ে পুজো করে ভোরের আলো ফোটার আগেই বিসর্জন দেওয়া হয়। এরপর বছরভর মূর্তিহীন মন্দিরে কালীর আরাধনা করা হয়। পাঁঠাবলি দেওয়ার রীতি প্রচলিত। আজও বহু পুরনো খাঁড়া ও মন্দির প্রাঙ্গণে যুপকাষ্ঠ রয়েছে।
তিনি আরও জানান, রাজ আমলে মন্দিরের পুজোর দায়িত্ব ছিল স্থানীয় তিনজন তহসিলদারের উপর। সেই সময় হলদিবাড়ির তহসিলদার ছিলেন শান্তি দাস, মেখলিগঞ্জের দুই তহসিলদার অজয় সিং ও বীরেন দে লক্ষ্মীপুজোর পরের দিন কাশিয়াবাড়ি চলে আসতেন। এরপর গোরু বা মোষের গাড়ি বোঝাই করে পুজোয় ব্যবহৃত পিতলের সামগ্রী, ভোগ রান্নার সরঞ্জাম সহ দেবীর সোনার গয়না নিয়ে আসতেন তাঁরা। হলদিবাড়ি ব্লকের বিভিন্ন হাট থেকে ১০০ থেকে ১৫০টি কালো পাঁঠা কেনা হতো বলির জন্য। কিন্তু তহসিলদারদের মৃত্যুর পর থেকে সেই সব সোনার গয়না ও ভোগ রান্নার সরঞ্জামের কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা দীনবন্ধু রায় বলেন, মন্দিরটি ঘিরে নানা জনশ্রুতি প্রচলিত। দেবী চৌধুরানি ও ভবানী পাঠক এই মন্দিরে পুজো দিতেন। সেই সময় এলাকাটি জঙ্গলে ঘেরা ছিল। এখন কাশিয়াবাড়ি বাজার ও জনবসতি গড়ে উঠেছে। আমরা চাই ঐতিহাসিক এই দেবী চৌধুরানির মন্দিরটি প্রশাসন সংস্কারের উদ্যোগ গ্ৰহণ করুক।