• গোরুমারার পিলখানায় বড় হচ্ছে ‘মাতৃহারা’ হস্তিশাবক
    বর্তমান | ২৩ অক্টোবর ২০২৪
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছে মেডিক্যাল বোর্ড। কোনওরকম যাতে অসুবিধা না হয়, সেজন্য ২৪ ঘণ্টা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন বনকর্মীরা। ‘ভিআইপি’ যত্নে গোরুমারার পিলখানায় বড় হচ্ছে ‘মাতৃহারা’ হস্তিশাবক। 

    সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ডুয়ার্সের জলঢাকা নদী থেকে হস্তিশাবকটিকে উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। তখন বয়স ছিল মাত্র দু’সপ্তাহ। দীর্ঘপথ পাহাড়ি নদীতে ভেসে আসায় শাবকটির শারীরিক অবস্থাও ছিল অত্যন্ত সঙ্কটজনক। ফলে বাঁচানোই রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় বনদপ্তরের কাছে। জরুরি ভিত্তিতে মেডিক্যাল বোর্ড গড়ে শুরু হয় চিকিৎসা। সঙ্গে তরল খাবার। প্রথম ক’দিন সেভাবে খাবার না খাওয়ানো গেলেও ধীরে ধীরে হস্তিশাবকটি খেতে শুরু করে। এখন অনেকটাই সুস্থ। তবুও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না বনকর্তারা। 

    গোরুমারার ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন বলেন বলেন, হস্তিশাবকটি এখন অনেকটাই সুস্থ। তার দেখভালে মেডিক্যাল বোর্ড রয়েছে। তাতে রয়েছেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ দু’জন চিকিৎসক। তাঁদের পরামর্শ মতোই সবটা চলছে। এখনও বেবিফুড এবং ওআরএস দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো আর কিছুদিন পর থেকে ধীরে ধীরে হস্তিশাবকটিকে ফল খাওয়ানোর চেষ্টা করা হবে। 

    ডিএফও বলেন, গোরুমারায় ওই হস্তিশাবকের জন্য আলাদা পিলখানা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এখনও এনক্লোজারেই রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা তার খাওয়াদাওয়া, যত্নআত্তির ব্যাপারে রোস্টার করে দিয়েছেন। সেইমতো চারজন বনকর্মীকে মোতায়েন রাখা হয়েছে। তাঁরা পালা করে ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করছেন। এক মুহূর্তের জন্য শাবকটিকে একা রাখা হচ্ছে না। 

    কোনও কুনকির সাহায্য ছাড়া দু’সপ্তাহের কোনও হস্তিশাবককে বাঁচানো রীতিমতো চ্যালেঞ্জের বলে জানিয়েছেন বনকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, গোরুমারায় এমন কোনও কুনকি নেই, যার দুগ্ধ পান করতে পারে হস্তিশাবকটি। জলদাপাড়ায় এমন একটি কুনকি রয়েছে। কিন্তু যে অবস্থায় হস্তিশাবকটিকে উদ্ধার করা হয়, সেসময় গোরুমারা থেকে জলদাপাড়ায় নিয়ে যাওয়ার ধকল সহ্য করতে পারত না সে। ফলে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে গোরুমারাতেই হস্তিশাবকটিকে বাঁচানোর লড়াই শুরু হয়। ডিএফও বলেন, গোরুমারায় প্রধান মাহুত যিনি আছেন, সেই দীনবন্ধু বর্মনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে হস্তিশাবকটি। অন্তত মাস তিনেক না গেলে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। এখনও হস্তিশাবকটির নামকরণ হয়নি। উপরমহল থেকে নাম দেওয়া হবে। 

    ডুয়ার্সের হিলা চা বাগান এলাকায় প্রথমে জলঢাকা নদীতে ভাসতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু তাঁরা উদ্ধার করতে পারেননি। পরে নাগরাকাটা বস্তি এলাকায় এসে কোনওমতে হস্তিশাবকটি সাঁতরে পাড়ে ওঠে। তখনই এলাকার মানুষ উদ্ধার করে বনদপ্তরে খবর দেয়। বনকর্মীদের ধারণা, কোনও বড় দলের সঙ্গে ছিল হস্তিশাবকটি। সেই দলে তার মা’ও ছিল। কোনওভাবে সে দলছুট হয়ে পড়ে। তার মা’ও ফিরিয়ে নিতে আসেনি।
  • Link to this news (বর্তমান)