রাজ্যের টাকায় আবাস পেতে যাচাই পর্ব, প্রথম দু’দিনেই বাদ ৪০ হাজার ‘অযোগ্য’ আবেদনকারীর নাম
বর্তমান | ২৩ অক্টোবর ২০২৪
প্রীতেশ বসু, কলকাতা: কেন্দ্র না দেওয়ায় রাজ্যের প্রান্তিক মানুষকে ডিসেম্বর মাসে বাড়ি তৈরির টাকা দেবে রাজ্যই। কিন্তু পাকাবাড়ি তৈরির জন্য আর্থিক সহায়তা কারা পাবেন? সেই তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে কোনও গলদ রাখতে নারাজ রাজ্য সরকার। ফলে যোগ্য উপভোক্তা চিহ্নিত করতে, উপ নির্বাচনের কারণে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কিছু এলাকা বাদ দিয়ে সারা রাজ্যেই চালু হয়েছে যাচাই পর্ব। রাজ্যের ঠিক করে দেওয়া নিয়মাবলি অনুযায়ী, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষক দলের সদস্যরা খতিয়ে দেখছেন আদৌও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বাড়ি তৈরির টাকা পাওয়ার যোগ্য কি না। সোমবার থেকে চালু হওয়া এই সমীক্ষায় ইতিমধ্যেই ২ লক্ষ বাড়ির যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। তার মধ্যে এই সহায়তা পাওয়ার জন্য ‘অযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রথম দু’দিনে যাচাই হওয়া ২ লক্ষের মধ্যে তালিকা থেকে বাদ পড়ছে প্রায় ৪০ হাজারের নাম।
কিন্তু তালিকা থেকে তাঁদের নাম বাদ দিতে হচ্ছে কেন? রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, এর আগে যাচাইয়ে কাজ হয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। কেন্দ্র ১১ লক্ষ গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়ার প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া পর কেটে গিয়েছে প্রায় দু’বছর। এই সময়কালে অনেকেই কষ্টেসৃষ্টে বাড়ি তৈরি করেও নিয়েছেন। আবার অনেকে যেখানে থাকতেন সেখান থেকে চলে গিয়েছেন অন্যত্র। এছাড়া কেন্দ্রের দেখানো পথেই কিছু বদল এসেছে এই ভাতা দেওয়ার নিয়মাবলিতেও। যেমন—আগে দেখা হতো পরিবারের মোট আয় ১০ হাজার টাকার কম কি না। সেই জায়গায় এখন পরিবারের কোনও সদস্যের ব্যক্তিগত আয় ১৫ হাজারের বেশি হলে এই আর্থিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারটি ‘অযোগ্য’ বিবেচিত হবে।
রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার জানান, কেন্দ্র টাকা না-দেওয়ায় মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের প্রান্তিক মানুষের মাথায় পাকা ছাদ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আর সেই কারণেই আমাদের লক্ষ্য, যেন ন্যায্য প্রাপকরাই এই সহায়তা পান। আর রাজ্যের আর্থ-সামাজিক উন্নতির কারণে অনেকে পরে নিজেরাই পাকাবাড়ি তৈরি করে নিতে পেরেছেন। স্বাভাবতই তাঁদের নাম বাদ যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের যাচাইয়ের পরে চূড়ান্ত উপভোক্তা তালিকা বা পার্মানেন্ট ওয়েটিং লিস্ট তৈরি করেছিল রাজ্য। তাতে নাম ছিল প্রায় ৩৪ লক্ষ বাড়ি তৈরির আবেদনকারীর। তারপর আদালতে মামলাসহ একাধিক কারণে এই তালিকায় যুক্ত হয় আরও ১ লক্ষ নাম। ফলে এই ৩৫ লক্ষের পাশাপাশি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী সেলে যাঁরা বাড়ি তৈরির জন্য সহায়তা চেয়ে যোগাযোগ করেছিলেন তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও যাচাইয়ের কাজ চালাচ্ছে রাজ্য। তার সঙ্গে রয়েছে রেমাল-সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাঁদের বাড়ির ক্ষতি হয়েছে তাঁদেরও নাম। ফলে ৩০ অক্টোবর সমীক্ষা শেষের পর এবারের চূড়ান্ত উপভোক্তা তালিকায় কতজনের নাম থাকে সেদিকেই নজর সংশ্লিষ্ট মহলের।