• স্কুল যাওয়ার পথে ট্যাক্সির ধাক্কায় মৃত্যু মেয়ে ও বাবার, পাইকপাড়ায় মর্মান্তিক ঘটন
    বর্তমান | ২৩ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাবার হাত ধরে স্কুল যাচ্ছিল ছোট্ট মেয়েটা। পরনে নিপাট ইউনিফর্ম। গলায় নীল-গোলাপি রঙের জলের বোতল। আচমকাই পাইকপাড়ার কাছে বিটি রোডে বিকট শব্দ। ট্যাক্সির ধাক্কায় উড়ে গিয়ে প্রায় বিশ হাত দূরে পড়ল বাবা ও মেয়ে। খুদে শিশু ও তার বাবার রক্তে ভেসে গেল বিটি রোড। সাতসকালেই দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল বাবা ও মেয়ের। পুলিস অভিযুক্ত ট্যাক্সি চালককে গ্রেপ্তার করেছে।

    বেহালা চৌরাস্তার পর এবার বিটি রোড। ফের দুর্ঘটনায় খুদে স্কুলপড়ুয়ার প্রাণ গেল। মঙ্গলবার সকাল ছ’টা নাগাদ চিৎপুর থানা এলাকায় পাইকপাড়ার কাছে দুর্ঘটনা ঘটে। বিটি রোডে ডানলপগামী ফ্ল্যাঙ্ক ধরে লকগেট ক্রসিংয়ের দিকে হাঁটছিলেন বাবা ও মেয়ে। সেখান থেকেই মেয়েকে স্কুলে পৌঁছতে বাস ধরেন অমিতকুমার সাউ (৩৯)। তিনি রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন পর্ষদের কর্মী। মেয়ের নাম মিশিকা সাউ (৫)। আগরপাড়া বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্রী সে। কাশীপুর থানা এলাকার বি বি গাঙ্গুলি লেনের বাসিন্দা তাঁরা। 

    প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকাল পৌনে ছ’টা নাগাদ বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন অমিত। সকালের ফাঁকা বিটি রোডে দ্রুতগতিতে পিছন থেকে আসছিল ট্যাক্সিটি। আচমকা রাস্তার ডানদিক ছেড়ে বাঁদিক ঘেঁষে এসে সরাসরি বাবা ও মেয়েকে ধাক্কা মারে হলুদ ট্যাক্সিটি। উড়ে গিয়ে রাস্তার ধারে কাদাজলের মধ্যে পড়েন দু’জনেই। আওয়াজ শুনেই আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শী দীপক শাহ বলেন, ট্যাক্সিচালক সিট বেল্ট লাগাননি। টালা ব্রিজ থেকে নামার পরই বিপজ্জনক গতিতে আসছিল গাড়িটি। আচমকাই ডিভাইডারের পাস থেকে বাঁদিকে দ্রুতগতিতে সরে আসে ট্যাক্সিটি। ধাক্কা খাওয়ার পরও হাত-পা নড়ছিল শিশুটির। 

    ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় শ্যামবাজার ট্রাফিক গার্ড ও চিৎপুর থানার পুলিস। কলকাতা পুলিসের অ্যাম্বুলেন্সে আর জি কর হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা দু’জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। লালবাজার সূত্রে খবর, মৃতের পরিবারের তরফে চিৎপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ঘাতক ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, ঘটনার পর ট্যাক্সি নিয়ে চম্পট দেয় চালক। কুমোরটুলি পার্কের কাছে ট্যাক্সিটিকে লুকিয়ে দেয় সে। তদন্তে নেমে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে ঘাতক ট্যাক্সিটিকে উদ্ধার করে চিৎপুর থানার পুলিস। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্ত ট্যাক্সিচালক সাহেব দাসকে।

    কলকাতা পুলিস জানিয়েছে, এদিনই আর জি করে মৃতদেহ দু’টির ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শেষ হয়। দুপুরেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখা, সায়েন্টিফিক উইং। ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখেন গোয়েন্দারা। অকুস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক বিভাগ। সেখানেই হাজির ছিলেন মৃত অমিতের ভাই জিষ্ণু ঘোষ। তিনি বলেন, ‘ট্যাক্সিচালক নেশা করেছিল। নাহলে এভাবে কোনও সুস্থ ব্যক্তি গাড়ি চালাতে পারে না। ২২ নভেম্বর মিশিকার পাঁচ বছরের জন্মদিন পালন করার প্ল্যান করেছিলাম আমরা। তার একমাস আগেই গোটা পরিবারের কোল খালি করে চলে গেল ভাইঝি।’
  • Link to this news (বর্তমান)