নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: ফেরিঘাট পরিচালনার অধিকার নিয়ে দুই পুরসভার মধ্যে চলছিল বিবাদ। প্রায় এক বছরের সেই অচলাবস্থা মেটাতে শেষপর্যন্ত টস করার সিদ্ধান্ত নিতে হল রাজ্য প্রশাসনকে। কার্যত বেনজির কায়দায় নির্ধারণ করা হল, কার হাতে থাকবে ফেরিঘাট পরিচালনার দায়িত্ব। মঙ্গলবার রাজ্য পরিবহণ দপ্তরের শীর্ষকর্তাদের উপস্থিতিতে ওই টস হয়েছে। তাতে প্রথমবারের জন্য বিতর্কিত ফেরিঘাট পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে হুগলির চন্দননগর পুরসভা। অন্যদিকে, বিবদমান পক্ষ উত্তর বারাকপুর পুরসভা পরবর্তী বছরে ফেরিঘাট পরিচালনা করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। গঙ্গার একপাড়ে রয়েছে গৌরহাটি ফেরিঘাট আর অন্য পাড়ে আছে উত্তর বারাকপুরের দেবীতলা ফেরিঘাট। ওই দুই ঘাটের মধ্যে ফেরি চলাচল নিয়ন্ত্রণ নিয়েই ২০২৩ সাল থেকে দুই পুরসভার ‘যুদ্ধ’ শুরু হয়েছিল।
বেনজিরভাবে হলেও সমাধান সূত্র মেলায় খুশি পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা বলেন, টস করে ফেরিঘাট পরিচালনার অধিকার বিলিবণ্টন করার কোনও ইতিহাস আমাদের নেই। দু’পক্ষই এমন অনড় অবস্থান নিয়েছিল যে, বাধ্য হয়েই বেনজির পদক্ষেপ করতে হয়েছে। সাধারণত, পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমেই ফেরি পরিবহণ ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এদিনের সিদ্ধান্তে খুশি উত্তর বারাকপুর পুরসভার কর্তৃপক্ষও।
বারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মলয় ঘোষ বলেন, চন্দননগর এককভাবে ফেরিঘাট পরিচালনার অধিকার চেয়েছিল। প্রাচীন আমলের ফরাসি নথি দিয়ে পুরকর্তারা সেই দাবি করেছিলেন। এদিন টস করে হলেও একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে। দীর্ঘদিনের জটিলতার অবসানও হয়েছে। আমরা খুশি। তবে প্রথমবার ফেরি পরিচালনার দায়িত্ব টসের মাধ্যমে পেলেও একক অধিকার হারানোয় কিছুটা অখুশি চন্দননগর পুর কর্তৃপক্ষ। তৃণমূলের প্রবীণ নেতা তথা চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী এদিন নিজেই রাজ্য পরিবহণ দপ্তরে ছিলেন। তিনি বলেন, ১৯৫৪ সালের আইন অনুসারে গৌরহাটি ফেরিঘাট আমাদের একক অধিকারে থাকার কথা। সেই বিষয়টিই পরিবহণ দপ্তরকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু শেষপর্যন্ত টস করে এক বছরের জন্য দু’টি পুরসভাকেই ফেরিঘাট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথম বছরের ফেরিঘাট পরিচালনার অধিকার অবশ্য চন্দননগরই পেয়েছে।
পরিবহণ দপ্তর ও পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গৌরহাটি-দেবীতলা ফেরিঘাট ২০২৩ সালে রাজ্য সরকার তৈরি করে দেয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটির উদ্বোধনও করেছিলেন। তখনই প্রথমবার সেখানে লঞ্চ পরিষেবা চালু করা হয়। তার আগে ওই ফেরিঘাটে নৌকা চলাচল করত। ফেরিঘাটটি তেমন জনপ্রিয়ও ছিল না। কিন্তু নতুন ফেরিঘাট ও লঞ্চ পরিষেবা বহাল হওয়ার পরেই তার কর্তৃত্ব নিয়ে লড়াইয়ে নেমে পড়ে চন্দননগর ও উত্তর বারাকপুর পুরসভা। বাধ্য হয়ে পরিবহণ দপ্তরকেই ফেরি পরিষেবা পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হয়। দু’পক্ষের দীর্ঘ বিবাদের কথা কানে যায় মুখ্যমন্ত্রীর। তিনিই রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা দাপুটে নেতা ফিরহাদ হাকিমকে সমস্যা মেটানোর দায়িত্ব দেন। শেষপর্যন্ত বেনজিরভাবে মঙ্গলবার টস করে ‘মালিকানা’ নির্ধারণ করতে হয়েছে।