চীনা আলোর দাপটের মধ্যেও উজ্জ্বল বাংলার মাটির প্রদীপ
বর্তমান | ২৩ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: দীপাবলি মানেই আলোর উৎসব। কয়েক বছর আগেও চীনা আলোকবাতির দাপটে অস্তিত্ব হারাতে বসেছিল গ্রামবাংলার চিরাচরিত মাটির প্রদীপ। সেই দাপট অবশ্য এখনও রয়েছে। কিন্তু প্রদীপের আলোতেই উৎসবের সার্থকতা রয়েছে বলে মনে করছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। গ্রামবাংলার মতো শহরেও বিভিন্ন সাইজের মাটির প্রদীপের চাহিদা বেড়েছে। দীপাবলির আগে উত্তর হাওড়ার ফকির বাগান এলাকায় কুমোরপাড়ায় ব্যস্ততা তুঙ্গে।
বেশ কয়েক প্রজন্ম আগে ফকির বাগান এলাকায় এসে বসতি গড়েন বিহারের কুম্ভকার শ্রেণির মানুষরা। বংশানুক্রমে আজও সেখানকার কয়েকশো পরিবার মাটির প্রদীপ তৈরির কাজ করে আসছে। বছরভর তাঁরা চায়ের ভাঁড়, মিষ্টি ও দইয়ের ভাঁড় তৈরি করে সালকিয়া, বড়বাজার, রাজাবাজার সহ শহরতলির বিভিন্ন পাইকারি মার্কেটে সরবরাহ করেন। কিন্তু এলইডির রমরমা বাজারেও গত দু’-তিন বছরে মাটির প্রদীপ তৈরি করে বাড়তি লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন তাঁরা। সেকারণে পুজোর আগে ফকির বাগানের কুমোর পাড়ার খুদে সদস্যরাও মাটির প্রদীপ তৈরির কাজে লেগে পড়েছে। সোমবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বিভিন্ন সাইজের সারি সারি প্রদীপ রোদে শুকোতে দেওয়া হয়েছে। বড় প্রদীপগুলির গায়ে তুলি দিয়ে লাল রং করছে বছর দশেকের একটি মেয়ে। বিনোদ প্রজাপতি নামের এক কারিগর বলেন, ‘কালীপুজোর মরশুমে প্রায় ১০ হাজার মাটির প্রদীপ তৈরি করছি। গত কয়েক বছরে পাইকারি মার্কেট থেকে বড় অর্ডার আসছে।’
মাটির প্রদীপ তৈরির কাঁচামাল অর্থাৎ ভালো মানের মাটি, কয়লা, কাঠের গুঁড়ো, ছাঁচের দাম আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। ডায়মন্ডহারবার থেকে এক ট্রাক মাটি আনতে প্রায় ১৪ হাজার টাকা খরচ পড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় প্রদীপের দাম একই রয়েছে বলে আক্ষেপ কারিগরদের একাংশের। ছেদিলাল প্রজাপতি নামের এক অশীতিপর কারিগর বলেন, ‘যতই বৈদ্যুতিক লাল-নীল বাতি আসুক, আলোর উৎসব মাটির প্রদীপ ছাড়া অসম্পূর্ণ।’ কারিগররা বিভিন্ন মাপের প্রদীপ ১ টাকা শুরু করে থেকে ১৩ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি করছেন পাইকারি বাজারে। খুচরো বাজারে সেই দাম আরও খানিকটা বাড়ছে। ক্রেতাদের মন টানতে ছোট প্রদীপেও থাকছে রং-বেরঙের ডিজাইন।