নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: উত্তর কলকাতার কাশীপুর রোডে বামনদাস মুখোপাধ্যয়ের প্রতিষ্ঠিত কালীবাড়ি এক সময়ে বিপ্লবীদের আত্মগোপনের জায়গা ছিল। এখানেই ১৯৩৮ সালে সুভাষচন্দ্র বসুকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। ১২০ বছর আগে বামনদাস প্রতিষ্ঠিত কৃপাময়ী দক্ষিণাকালীর পুজো আজও প্রতিবছর কালীপুজোর দিনে হয় প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই। তবে এখানে কালীপুজোয় কোনও বলি দেওয়া হয় না। মন্দিরের পুরোহিত শুভাশিস চক্রবর্তী জানান, কালীপুজোর রাতে মাকে নানা উপাচারে পুজো করা হয়ে থাকে। ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় সাদা ভাত, খিচুড়ি, লুচি, পোলাও, পাঁচ রকমের ভাজা, দুই রকমের তরকারি, আলুর দম, ডাল, শুক্তো, চাটনি, পায়েস প্রভৃতি। ওইদিন সন্ধ্যায় প্রথমে মহালক্ষ্মীর পুজো হয়ে থাকে। এরপর মায়ের আরতির পর শুরু হয় কৃপাময়ী কালীপুজো। এই মন্দিরেই রয়েছে রঘুনাথ নারায়ণ এবং দুর্গেশ্বর ও ক্ষেত্রেশ্বর নামে দু’টি শিবলিঙ্গ। তাঁরাও পুজো পেয়ে থাকেন। মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীপুজোর দিন ছাড়াও আর পাঁচটা দিনও দুপুরে মাকে অন্নভোগ দেওয়া হয়। রাতে মাকে লুচি, দুধ ও মিষ্টান্নসহকারে ভোগ নিবেদন করা হয়। প্রয়াত ইতিহাসবিদ অজিত সেনের ‘বরানগর আঞ্চলিক ইতিহাস’-এর দশম খণ্ড থেকে জানা যায়, বামনদাসবাবু প্রচুর ভূসম্পত্তির মালিক ছিলেন। ১৮৯৪ সালে প্রচুর পরিমাণ জমি ক্রয় করে কাশীপুর রোডে বিশাল দেবালয় ও কালীমন্দির তৈরি করেন। সেখানে তিনি বিশাল পুকুর খনন ও উদ্যান স্থাপন করেন। ওই বইতে তিনি উল্লেখ করেছেন, স্বপ্নাদেশে বামনদাস মুখোপাধ্যায় বিগ্রহ তৈরির জন্য বেলুড়ের গঙ্গাতীরে দাঁ পরিবারের উদ্যানে পড়ে থাকা বিশালকার কষ্টিপাথরের সন্ধান পান। সেই কষ্টিপাথর সংগ্রহের পর কালী মন্দিরে শ্রীশ্রী কৃপাময়ী নামে কালী মূর্তি ও দুই শিবলিঙ্গ ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে প্রথম থেকেই শাক্তমতে পুজো হয়ে আসছে।
১৯২১ সালে বামনদাসবাবুর মৃত্যুর পর শাস্ত্রীয় বিধান মেনে ও ট্রাস্টের নির্দেশ মতো সারা বছর এখানে পুজো‑পার্বন হয়। এই মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিষ্ঠাতা বামনদাসবাবু ছিলেন সমাজসেবী। তিনি বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, পুকুর খনন সহ নানান কাজ করে গিয়েছেন। হাওড়া জেলায় বাইনান বামনদাস হাইস্কুল, আমতার কাছে দামোদার নদীতে বাঁধ নির্মাণ সহ নানা জনহিতকর কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। - নিজস্ব চিত্র