সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: ২০০৮সালের ১৮আগস্ট বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা বন্ধুকে দেখতে এসেছিলেন রায়নার সাবের আলি। বাঁধগাছার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি ওয়ার্ড থেকে বেরতেই হার্মাদরা পিছু নেয়। হাসপাতাল চত্বরেই তাঁর উপর হামলা করা হয়। মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসকরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সেইসময় হাসপাতালের নিরাপত্তা কোথায় ছিল? এই প্রশ্ন তুলে ‘জাস্টিস’ চাইছে সাবের আলির পরিবার। তাঁর স্ত্রী তামিনা বিবি বলেন, এখন হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে সিপিএম চিৎকার করছে। অথচ স্বামীকে হাসপাতাল চত্বরেই পিটিয়ে মারা হয়েছিল। সেই সময় নিরাপত্তা বলতে কিছু ছিল না। হাসপাতাল চত্বরে স্বামীকে মারা হলেও তাঁকে কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। এব্যাপারে সিপিএম নেতা অমল হালদার বলেন, এখন তো তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে। ওরা তদন্ত করতেই পারে।
তৃণমূল করায় সাবেরকে পিটিয়ে মেরেছিল সিপিএম। রায়নার বাঁধগাছা এলাকার তৃণমূল নেতা শেখ রসিদ বলেন, সেইসময় সিপিএমের আক্রমণে আমাদের অনেক কর্মী জখম হয়েছিলেন। সিপিএম যাদের মারত তারা যাতে চিকিৎসা না পায় তারজন্য নজরদারি চালাত। চিকিৎসকরাও ভয়ে কিছু বলতে পারতেন না। দিনের পর দিন কার্যত বিনা চিকিৎসায় বিরোধী দলের আক্রান্ত কর্মীরা হাসপাতালে পড়ে থাকতেন। কেস এড়াতে অনেককে সরকারি হাসপাতালে ভর্তিই নিত না। হাসপাতালে গেলে মার খেতে হবে, এই ভয়ে অনেকে লুকিয়ে নার্সিংহোমে চিকিৎসা করাতেন। এখন ওরা অনেক কথা বলছে। কিন্তু তখন কী হয়েছে, সবাই জানে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা বন্ধুকে দেখতে আসা যুবককে পিটিয়ে মারা হয়েছিল। কিন্তু কারও সাজা হয়নি। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই তারা জামিন পেয়ে গিয়েছিল।
রায়না-১ ব্লক তৃণমূল নেতা বামদেব মণ্ডল বলেন, সিপিএম আমলে হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলে কিছুই ছিল না। ওদের নেতারাই হাসপাতাল দাপিয়ে বেড়াত। ওদের নেতাদের চিঠি আনলে যে কেউ বেড পেয়ে যেত। বিরোধীদলের লোক হলে তাঁকে মাটিতে ফেলে রাখা হতো। সিপিএমই হাসপাতালে ‘থ্রেট কালচার’ শুরু করেছিল। সেইসময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে সাবের আলির প্রাণ যেত না। তাঁকে হাসপাতালের ইমার্জেন্সির গেটের বাইরে থেকে মারধর শুরু করা করা হয়। সেখান থেকে মারধর করতে করতে গেটের বাইরে আনা হয়। মেরে তাঁকে ঝোপের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সিপিএম নেতারা এখন শান্তির দূত সাজতে চাইছে।
সাবের আলির স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী তৃণমূল করত। স্বামী খুন হওয়ার পর পরিবারে ঝড় বয়ে গিয়েছিল। চার ছেলেকে নিয়ে অথৈ জলে পড়ে গিয়েছিলাম। সেই সময় পার্টি পাশে ছিল বলেই কোনও রকমে টিকে যাই। এখন সিপিএম নেতারা কথায় কথায় জাস্টিস চাইছে। কিন্তু ওদের রাজত্বে আমি কেন জাস্টিস পেলাম না? এর উত্তর ওদের দিতে হবে। আজও খুনিদের শাস্তি হয়নি। তারা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে।