নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণনগরে ছাত্রীর রহস্য মৃত্যুতে এবার চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেল পুলিস। ধৃত প্রেমিক রাহুল বোসের প্রথম পক্ষের স্ত্রী হদিশ মিলল তদন্তে। অর্থাৎ, মৃত ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার আগে রাহুল ছিল বিবাহিত। স্বভাবতই এই তথ্য হাতে আসতেই তদন্তের গতি বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ওই তরুণীকে জেরাও করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
জানা গিয়েছে, রাহুলের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সোনারপুর এলাকায়। সম্ভবত তিনি কলেজ পড়ুয়া। খোঁজ পাওয়ার পরই তাঁকে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে আসা হয়। ঘটনার সঙ্গে তাঁর সরাসরি কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ম্যারাথন জেরাও করা হয়েছে। তাতে একাধিক সূত্র উঠে আসছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। যেমন, ওইদিন রাতে রাহুলের এক বন্ধুর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে কথা হয় ওই কলেজ পড়ুয়ার। ছাত্রীর মৃত্যু নিয়েও দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা হয়। ঘটনায় রাহুল যাতে ভেঙে না পড়ে তার জন্য শলাপরামর্শ চলেছিল। সেই কথোপকথনের অডিও হাতে পেয়েছে পুলিস। কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এসপি অমরনাথ কে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আমরা আরও একজনকে ডেকে এনেছি। তাঁর সঙ্গে রাহুলের একটা সম্পর্ক ছিল বলে জানা গিয়েছে। আমরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছি। তাই রাহুলের পূর্বের সম্পর্কের বিষয়টিও আমাদের তদন্তে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।’
রাহুলের সঙ্গে মৃত ছাত্রীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে। জুন মাসে কাজের জন্য রাহুল চলে যায় বেঙ্গালুরুতে। সেখানে কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয় ছাত্রীকে। সেইমতো রাহুলের বাড়ি থেকে ১৩ হাজার টাকা নিয়ে একাই বেঙ্গালুরুতে যায় সে। কর্মস্থলের নির্ধারিত ইউনিফর্ম কিনে দিয়েছিল রাহুল। জুন মাসের শেষের দিকে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করে নিজেদের বৈবাহিক সম্পর্কের কথা জানায় ওই ছাত্রী। বেঙ্গালুরুতে দিন পনেরো থাকার পর পরিবারের চাপে সে কৃষ্ণনগর ফিরে আসে। রাহুলের মা’কে ফোন করে ওই ছাত্রী জানায়, সে ৩৫ হাজার টাকা রাহুলের বাড়িতে দিয়ে আসবে। যদিও ঘটনার দিন পর্যন্ত সেই টাকা রাহুলকে ফেরত দেয়নি ওই ছাত্রী।
পুলিস তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, সোনারপুরের ওই কলেজ পড়ুয়া তরুণীর সঙ্গে রাহুলের সম্পর্কও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। টিকেছিল মাত্র এক বছর ৮ মাস। গত বছর ডিসেম্বর মাস নাগাদ তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই তাদের মধ্যে বিচ্ছেদও হয়ে যায়। তারপর দীর্ঘদিন রাহুল ও ওই তরুণীর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন রাহুল মৃত ছাত্রীকে না জানিয়ে অন্য এক তরুণীর সঙ্গে রানাঘাটে সিনেমা দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু সেটি কোনওভাবে মৃত ছাত্রী জেনে যায়। রাত ১০টা ১২ মিনিট নাগাদ রাহুল তার এক বন্ধুর ফোন দিয়ে মৃত ছাত্রীর সঙ্গে শেষবার কথা বলেছিল। কারণ, রাহুলের ফোন সেই সময় সুইচ অফ ছিল। তারপর রাত পৌনে এগারোটা নাগাদ মৃত ছাত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানায়, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’ এমনকী অডিও বার্তাও দেয়। রাহুল ও মৃত ছাত্রীর বন্ধুরা সেটা দেখে ও শুনে ফোনাফোনি শুরু করে। তখনই রাহুলের এক বন্ধু ফোন করে সোনারপুরের ওই তরুণীকে। দু’জনের মধ্যে ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা হয় বলে পুলিস জানতে পেরেছে।