শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা: পাঁচ বছরেই রাজ্য পুলিসের এক ডিএসপির আয় বহির্ভূত সম্পত্তির পরিমাণ চার কোটি টাকা! জমা পড়া নথি দেখে চক্ষু চড়কগাছ আদালতের। কাঁড়ি কাঁড়ি নগদ জমা পড়েছে এই ক’বছরে। নিজের তো বটেই, পরিবারের এমন কেউ নেই, যাঁর নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি। অভিযুক্ত রাজ্য পুলিসের ওই ডিএসপির বিরুদ্ধে আয় বহির্ভূত সম্পত্তির মামলা রুজু করেছে দুর্নীতি দমন শাখা। তাঁর বারাকপুরের বাড়িতে তল্লাশিও হয়েছে। সেখান থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কাগজপত্র ও বিনিয়োগের নথি।
আদালত সূত্রে খবর, একসময় হাওড়া সিটি পুলিসে ট্রাফিক ইনসপেক্টর ছিলেন অভিযুক্ত। তখনই তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। ‘মান্থলী’ সিস্টেম চালানো থেকে শুরু করে তিনি বিভিন্ন অনৈতিক কাজকর্ম করতেন বলে অভিযোগ। পদোন্নতি হওয়ার পর তিনি রাজ্য পুলিসের তৃতীয় ব্যাটালিয়নের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ড্যান্ট হন, যা ডিএসপি পদমর্যাদার সমতুল। হাওড়ায় থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য ভিজিলেন্স কমিশনে অভিযোগ জমা পড়ে। অনুসন্ধান করতে গিয়ে চার কোটি টাকার আয় বহির্ভূত সম্পত্তির নথি পায় কমিশন। এছাড়া বেনামে থাকা বেশকিছু সম্পত্তির খোঁজ মিলেছিল। বছর খানেকের বেশি সময় ধরে তদন্ত চালানোর পর কমিশন দেখে ডিএসপির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে। এরপর কমিশন দুর্নীতি দমন শাখাকে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইন ও আয় বহির্ভূত সম্পত্তির মামলা শুরু করার নির্দেশ দেয়। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন শাখা চলতি মাসের প্রথমেই তাঁর বিরুদ্ধে কেস রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।
ব্যাঙ্কশালে নগর দায়রা আদালতে জমা পড়া নথি থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৮-২৩ আর্থিক বর্ষ পর্যন্ত তাঁর সম্পদ ও নগদ বৃদ্ধির বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ঘটনাচক্রে এই সময়কালের বেশিরভাগটাই তিনি হাওড়ায় পোস্টিং ছিলেন। এই সময় তিনি যে বেতন পেয়েছিলেন তার নথি সংগ্রহ করার পর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আয় বহির্ভূত সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া যায়। দেখা যায়, এই সময়ে তিনি যা বেতন পেয়েছেন, তার থেকে অনেক বেশি টাকা তাঁর ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে। অথচ এই পাঁচটি আর্থিক বছরে তাঁর মোট রোজগারের পরিমাণ ৫০ লাখেরও নীচে রয়েছে। আদালতে সূত্রে খবর, এই পাঁচটি আর্থিক বছরে তাঁর, স্ত্রী, সন্তান সহ পরিবারের অন্যদের নামে খোলা সব মিলিয়ে তিরিশটি অ্যাকাউন্টে শুধু নগদ জমা পড়েছে দু’ কোটি টাকা। এই অ্যাকাউন্টগুলি খোলা হয়েছে ২০১৮-২৩ সালের মধ্যে। এছাড়া ব্যাঙ্কে বিভিন্ন সময়ে লেনদেন হয়েছে আরও দু’ কোটি টাকা। এর মধ্যে শেয়ার সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থায় বিনিয়োগ রয়েছে। এই টাকার পুরোটাই দুর্নীতি করে আসা বলে আদালতে জমা পড়া নথি থেকে জানা যাচ্ছে। এছাড়া বারাকপুরে আরও দু’টি বাড়ি রয়েছে। বাড়ির বিভিন্ন কাজকর্ম রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। স্ত্রীর নামে ব্যবসা রয়েছে বলেও খবর। এর বাইরেও বেনামে আরও কিছু জমি ও অন্য ব্যবসায় টাকা খাটছে বলে জানা যাচ্ছে। অভিযুক্ত ওই ডিএসপিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে।