এই সময়, কুলতলি: কথায় আছে নদীর ধারে বাস, চিন্তা বারো মাস। তা হাড়ে হাড়ে বোঝেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত কুলতলি ব্লকের দেউলবাড়ি-দেবীপুর পঞ্চায়েতের হইধরপাড়া ও আদুলেরটেক গ্রামের লোকজন। সুন্দরবনের মাতলা নদীর একেবারে গাঁ ঘেঁষা এইসব এলাকা। যখনই আয়লা, উম্পুন, বুলবুল, ইয়াস আছড়ে পড়েছে, ততবারই মাটির নদীবাঁধ খড়কুটোর মত উড়ে গিয়েছে জলোচ্ছ্বাসে। তারপর দুর্ভোগ নেমে এসেছে লোকালয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই দানার আগে তাই আতঙ্কে কাঁটা হয়ে রয়েছেন এখানকার বাসিন্দারা।বিশেষ করে শীতের মুখে এই ঘূর্ণিঝড় উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে প্রান্তিক এলাকার মানুষজনের। কারণ মাঠ ভর্তি এখন সবুজ ধান। এই সময়ে যদি ফের বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢোকে তা হলে সব শেষ। বাঁধের বেহাল দশায় তাই ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয়রা। চেনা মাতলা নদীর ভয়ঙ্কর সেই রূপের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন সকলে। বাঁধের পাশেই কুঁড়েঘরে বাস গুণধর নস্করের। তিনি বললন, ‘আমরা খুবই গরিব। দেউলবাড়ির মাতলা নদীর একেবারে বাঁধের পাশেই থাকি। আমরা বড় নদীর ধারে থাকি বলে বিপদও বেশি। এর আগে অনেকবার ঘূর্ণিঝড়ে আমরা আশ্রয়হীন হয়েছি। হয়তো এ বারও হব।’
আর এক বাসিন্দা পূর্ণিমা নস্করের কথায়, ‘জানি না কেন সরকার মাতলা নদীর এই বাঁধ কংক্রিটের করছে না। যদি করত তা হলে প্রত্যেক বছর আমাদের মতো অসহায় মানুষদের গৃহহীন হতে হতো না।’ বাঁধের ধারেই ঘর স্বরূপ নস্করের। তিনি আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘মাতলা সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় নদী। অথচ সেই নদীর বাঁধ কি না হালকা পাতলা বাঁশ দিয়ে মেরামত করা হয়। ওই বাঁশ দিয়ে কি আর ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস ঠেকানো যায়?’
শুধুমাত্র দেউলবাড়ি-দেবীপুর পঞ্চায়েত এলাকা নয়, পাশের গোপালগঞ্জ পঞ্চায়েতের কৈখালিতে নদীবাঁধের যা অবস্থা, তাতে ভয়ের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। একই অবস্থা গুড়গুড়িয়া-ভুবনেশ্বরী ও মৈপীঠ-বৈকুণ্ঠপুর পঞ্চায়েত এলাকাতেও। সমস্ত দুর্বল নদীবাঁধ দুর্যোগের আগেই মেরামতের কাজ শুরু করেছে সেচ দপ্তর। মঙ্গলবার গোপালগঞ্জ পঞ্চায়েতের কৈখালি গ্রামের নদীবাঁধের অবস্থা সরেজমিনে ঘুরে দেখেন কুলতলির বিডিও সুচন্দন বৈদ্য।
পাশাপাশি এ দিন কুলতলি ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে স্বাস্থ্য দপ্তর, সেচ দপ্তর, পূর্ত দপ্তর, খাদ্য দপ্তর, বিদ্যুৎ দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক হয়। বারুইপুরের এসডিও চিত্তদীপ সেন বলেন, ‘এসডিও ও বিডিও অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সমস্ত বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলিকে তৈরি রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে আমরা স্কুলগুলিকেও ত্রাণশিবির হিসেবে কাজে লাগাব। পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী মজুত করা হয়েছে।’