শহরের এদিকওদিক পড়ে থেকে পরিবেশ দূষণ বাড়ানো ছাড়া আর কোনও কাজে লাগে না ওসব জিনিস। পুজো শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ফ্লেক্স আর ব্যানারের কী বা মূল্য থাকে সাধারণ মানুষের কাছে? কিন্তু সেই সব অকাজের জিনিসকে এ বার দুর্গত মানুষদের মাথার ছাদ হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলছে শহরের একটি সংগঠন। পুজোর শুভেচ্ছা জানানো বড় মাপের ফেস্টুন কিংবা আলতা-সিদুরের বিজ্ঞাপন দেওয়া ব্যানারগুলিকে পর পর সেলাই করে তৈরি করা হচ্ছে ত্রিপলের মতো আচ্ছাদন। যা ‘দানা’-র পরে সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আপাতত বড়বাজারের ত্রিপলপট্টিতে চলছে অস্থায়ী এই ‘ছাদ’ বানানোর কাজ।কলকাতার বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেঘদূতম ফাউন্ডেশন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দুর্গতদের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছে। উম্পুন কিংবা ইয়াশ সবক্ষেত্রে দুর্দশাগ্রস্তদের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। এ বার পুজো শেষ হতেই সংস্থার সদস্যরা জানতে পারেন ‘দানা’-র প্রভাবের সম্ভবনার কথা। সে সময়ে সংগঠনের পদাধিকারীদের চোখে পড়ে শহরের রাস্তায় দূষণ বাড়িয়ে চলা হোডিং কিংবা ফ্লেক্সের কথা। ততদিনে পুজো শেষ হয়ে যাওয়ায় সেগুলোর কোনওটা ছিঁড়ে গিয়ে হাওয়ায় উড়ছিল অথবা রাস্তায় এদিকওদিক আবর্জনা হিসেবে পড়েছিল।
দূষণ বাড়ানোর এসব সামগ্রী যে কাজে লাগানো যায় তা মাথায় আসে সংস্থার অন্যতম কর্ণধার সগুনা মুখোপাধ্যায়ের। কলকাতার দুর্গাপুজোকে বিদেশীদের কাছে জনপ্রিয় করার জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন তিনি। ফলে শহরের নানা পুজো কমিটির সঙ্গে তাঁর সখ্য রয়েছে। সেই ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে পুজো-কর্তাদের কাছে অনুরোধ করেন, সকলে যদি নিজেদের পুজোয় ব্যবহৃত ব্যানার, হোর্ডিং, ফ্লেক্স তাঁদের দপ্তরে পৌঁছে দেন, তাহলে বাকি কাজ সংস্থার সদস্যরা করে নিতে পারবেন।
সেই আবেদনে কাজও হয়। কলকাতার উত্তর এবং দক্ষিণের প্রায় ১৫টি বড়-ছোট পুজো কমিটি নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে সে সব জিনিস পৌঁছে দেন মেঘদূতমের দপ্তরে। মঙ্গলবার বিকেলেই এসব সামগ্রী বোঝাই গাড়ি চলে যায় বড়বাজারে। রাত থেকে শুরু হয়ে যায় ছাউনি তৈরির কাজ।
এদিন সগুনা বলেন,‘বৃহস্পতিবার রাতে দানার ল্যান্ড করার কথা। তার আগে আমাদের আচ্ছাদন তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে। পরেরদিন থেকে যেখানে যেখানে খবর পাব, গাড়ি নিয়ে আমরা দুর্গত মানুষদের পাশে গিয়ে দাঁড়াব।’
সংস্থার অন্য সদস্যদের বক্তব্য, ‘এর আগে বিভিন্ন ঝড়ের ত্রাণ পৌঁছতে গিয়ে আমরা দেখেছি সাধারণ মানুষের মাথা গোঁজার কিছু থাকে না। বহু জায়গা আছে যেখানে স্কুল বাড়ি, পঞ্চায়েত অফিস কাছাকাছি কিছুই নেই। লোকে গাছের নীচে পর্যন্ত আশ্রয় নেয়। তাই আমরা ত্রিপলের মতো এগুলো তৈরি করছি।’
সগুনার দাবি, ‘আমাদের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। তাঁরা দুর্গম এলাকাতে গিয়ে এসব জিনিস লোকেদের হাতে তুলে দিয়ে আসবেন। আসলে এ বার সামনে পুজো থাকায় আমরা মোটা ভিনাইলগুলিকে কাজে লাগাতে পারছি। না হলে এ সব হোডিং, ব্যানার তো দূষণ বাড়ানো ছাড়া আর কারও কোনও কাজেই আসত না।’