দ্রোহ এবার গবেষণায়, থিসিসের শেষে 'তিলোত্তমা'র জন্য আক্ষেপ
হিন্দুস্তান টাইমস | ২৩ অক্টোবর ২০২৪
আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় নিগৃহীতা, নিহত চিকিৎসক পড়ুয়াকে তাঁদের গবেষণাপত্র উৎসর্গ করলেন অন্তত ১২ জন জুনিয়র চিকিৎসক।
গত ৮-৯ অগাস্টের রাতে এক নির্মম ও পৈশাচিক ঘটনার শিকার না হতে হলে আরজি করের নির্যাতিতাও তাঁর তৈরি করা গবেষণাপত্র জমা দিতেন। কিন্তু, নিষ্ঠুর নিয়তি তাঁকে তাঁর সেই কাজ সম্পূর্ণ করতে দেয়নি।
তথ্য বলছে, চেস্ট মেডিসিন বিভাগের ওই তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়া তাঁর গবেষণাপত্র তৈরি করে ফেলেছিলেন। এমনও অভিযোগ উঠেছিল যে, তৎকালীন কর্তৃপক্ষের কিছু কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় সেই গবেষণাপত্র জমা করা নিয়েও সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।
পরবর্তীতে তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর গর্জে ওঠে শহর কলকাতা। ক্রমে সেই আন্দোলন রাজ্য তথা দেশের নানা অংশে ছড়িয়ে পড়ে। আর এবার সেই নিগৃহীতাকে সম্মান জানিয়ে নিজেদের গবেষণাপত্র তাঁকে উৎসর্গ করলেন অন্তত ১২ জন চিকিৎসক পড়ুয়া।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় এমনই দুই জুনিয়র চিকিৎসকের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এঁদের মধ্যে একজন হলেন বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস-এর জুনিয়র চিকিৎসক। এবং অন্যজন হলেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্য়ান্ড পাবলিক হেল্থ-এর কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের পিজিটি। তাঁরা দু'জনই তাঁদের পোস্ট ডক্টোরাল থিসিস বা গবেষণাপত্র আরজি করের নিগৃহীতাকে উৎসর্গ করেছেন।
উল্লেখিত দুই জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে প্রথম জন দেবরূপ দাস সম্প্রতি তাঁর গবেষণাপত্রটি ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ হেল্থ সার্ভিসেস-এ জমা করেছেন।
তাঁর গবেষণাপত্রের কভার পেজে লেখা রয়েছে, 'আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের পিজিটি, অভয়ার স্মৃতির উদ্দেশ্য়ে উৎসর্গীকৃত। তাঁর আত্মার শান্তি এবং তাঁর জন্য সুবিচার কামনা করি।'
ঠিক একইভাবে অন্য পিজিটি, রুমেলিকা কুমার তাঁর তৈরি করা গবেষণাপত্রে লিখেছেন, 'আমি আমার গবেষণাপত্র শেষ করতে পেরেছি। কিন্তু, তিলোত্তমা পারেনি।'
এঁদের মধ্যে দেবরূপ দাসকে উদ্ধৃত করে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, 'ওই পৈশাচিক অপরাধের বিরুদ্ধে এভাবেই মৌন প্রতিবাদ জানালাম আমি। এটাই আমার প্রতিবাদের ধরন ও ভাষা। আমি আমার গবেষণাপত্র ওঁকে উৎসর্গ করেছি। এর জন্য এখনও পর্যন্ত আমাকে কেউ কোনও নেতিবাচক বার্তা দেননি। আর আমার মনেও হয় না যে তেমন কিছু হবে। কারণ, আমি ভুল কিছু করিনি।'
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, শুধুমাত্র এই দু'জনই নন। একাধিক সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অন্তত ১২ জন চিকিৎসক পড়ুয়া তথা জুনিয়র চিকিৎসক এভাবেই তাঁদের গবেষণাপত্র আরজি করের নিগৃহীতাকে উৎসর্গ করে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা এবং এই নারকীয় অপরাধের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
জুনিয়র চিকিৎসকদের এহেন মৌন প্রতিবাদে খুশি সিনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা তাঁদের উত্তরসূরিদের এই মানসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন।