‘ডানা’য় লাল সতর্কতা চার জেলায়, কলকাতা থেকে শঙ্করপুর সামলাতে কী ব্যবস্থা? কী বলছে হাওয়া অফিস?
প্রতিদিন | ২৪ অক্টোবর ২০২৪
নিরুফা খাতুন: ক্রমশ এগিয়ে আসছে ‘ডানা'(Cyclone Dana)। বিপদ বাড়াচ্ছে তার ঝাপটা। যদিও ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফল হবে না বাংলায়। তবে অতি ভারী বৃষ্টিতে ভাসবে ৪ জেলা। চার জেলায় জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। কলকাতায় কমলা সতর্কতা জারি করল হাওয়া অফিস। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে কোমর বেঁধেছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে উপকূলবর্তী এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে সরানো হচ্ছে। মাইকিং করে করা হচ্ছে সতর্কও। সমুদ্রে নামার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। দিঘা-তাজপুর-শংকরপুর থেকে সুন্দরবন খালি করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। সবমিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কোমর বেঁধে নবান্ন।
বুধবার বিকেলের আবহাওয়া দপ্তরের বুলেটিন বলছে, আপাতত পারাদ্বীপ থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ‘ডানা’। ধামরা থেকে দূরত্ব ৫২০ কিলোমিটার। আগামী কাল সকালে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে সেটি। উত্তর ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ভিতরকণিকার কাছে ধামরায় আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে পূর্ব মেদিনীপুর। এই জেলায় সবচেয়ে বেশি থাকবে ঝড়ের গতিবেগ। প্রতি ঘণ্টায় ১১০-১১০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিমি। সাগর এবং সুন্দরবনে ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিমি। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি প্রতি ঘণ্টায় ৬০-৭০ কিলোমিটার বেগে বইবে হাওয়া। দমকা হাওয়ার বেগ হতে পারে সর্বোচ্চ ৮০ কিমি প্রতি ঘণ্টা।
সবচেয়ে খারাপ আবহাওয়া থাকবে ২৪-২৫ অক্টোবর। আগামিকাল ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। শুক্রবার লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে ভাসবে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং ঝাড়গ্রাম। কলকাতা, হুগলি, হাওড়া, বাঁকুড়ায় প্রচুর বৃষ্টির আশঙ্কা। জারি হয়েছে কমলা সতর্কতা। শনিবার থেকে ঝড়বৃষ্টির দাপট কমবে। তবে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে বৃষ্টি চলবে। পূর্ব মেদিনীপুর ১ থেকে ২ মিটার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ০.৫ মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা।
বিপদ এড়াতে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলীয় (দিঘা, শংকরপুর, তাজপুর, মন্দারমনি) এলাকায় ২৩-২৫ অক্টোবর পর্যন্ত নতুন করে হোটেলে বুকিং নেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পূর্ব মেদিনীপুর প্রশাসন। সমুদ্র স্নানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মাইকিং করা হচ্ছে। তিন কোম্পানি এনডিআরএফ পৌঁছে গিয়েছে জেলায়। পাঁচটি ব্লকে ৬০টি ত্রাণশিবির প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। প্রাথমিক স্কুল ও হাই স্কুলগুলিতেও ত্রাণ শিবির তৈরি করা হয়েছে। পাঁচটি মাল্টি পারপাস রেসকিউ শেল্টার (এমপিআরএস) তৈরির কাজ শেষের পথে। তার মধ্যে চারটির কাজ সম্পূর্ণ। এছাড়াও ১৭টি স্থায়ী ফ্লাড শেল্টার রয়েছে।
সুন্দরবনের দুর্বল নদীবাঁধগুলির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে প্রশাসন। নদী ও সমুদ্রবাঁধ ভেঙে বা উপচে জনবসতি এলাকায় জল ঢুকলে জলবন্দি বাসিন্দাদের তৎক্ষণাৎ উদ্ধারে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে সেচদপ্তরকে। নামখানার বকখালি ও মৌসুনি, সাগরের ঘোড়ামারা ও পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুরে বাসিন্দাদের উঁচু স্কুলবাড়ী অথবা ফ্লাডশেল্টার সরানো হয়েছে। বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ ও গঙ্গাসাগরে বুধবার থেকে পর্যটক ও পূন্যার্থীদের সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। সমুদ্রসৈকতগুলিতে বিপর্যয় মোকাবিলাবাহিনীর সদস্যদের রাখা হয়েছে পাহারায়। সতর্ক রয়েছে কলকাতা, হাওড়া পুরসভাও। নবান্নে চালু হয়েছে কন্ট্রোলরুমও।