এই সময়, কলকাতা ও নয়াদিল্লি: জট কাটিয়ে কলকাতা মেট্রোর পার্পল লাইন অর্থাৎ জোকা-বিবাদী বাগ রুটের কাজ শুরুর অনুমতি দিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে বিশেষ শর্ত আরোপ করেছে শীর্ষ আদালত। বুধবার বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি পিকে মিশ্র এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গড়া কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সেন্ট্রালি এমপাওয়ার্ড কমিটি বা সিইসি-র অনুমোদন ছাড়া ময়দান চত্বরে একটি গাছও কাটা যাবে না। কোনও গাছ স্থানান্তরিত করাও যাবে না। কলকাতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘পিপল ইউনাইটেড ফর বেটার লিভিং ইন কলকাতা’ (পাবলিক)-এর তরফে দায়ের করা মামলার শুনানিতেই বুধবার এমন সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গভাইয়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চের৷ সর্বোচ্চ আদালত দ্রুত সিইসি-র উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কলকাতায় গিয়ে ময়দান এলাকার পরিবেশ সরেজমিনে খতিয়ে দেখার নির্দেশও দিয়েছে৷জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো প্রকল্পের কাজের জন্য ময়দান এলাকায় কয়েকশো গাছ কাটা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করে আরভিএনএল-এর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টে আরভিএনএল জানিয়েছিল, তারা মেট্রোর নির্মাণ প্রকল্পের প্রয়োজনে কিছু গাছ কেটে ফেললেও পরিবর্তে নতুন গাছ লাগিয়ে দেবে৷ একইসঙ্গে সংস্থার প্রস্তাব ছিল, বেশ কিছু গাছকে ময়দান এলাকা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে অন্যত্র প্রতিস্থাপন করা হবে৷ নির্মাণকারী সংস্থার এমন দাবির পরে ‘পাবলিক’-এর তরফে দায়ের করা জনস্বার্থের মামলাটি খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট৷ সেই সিদ্ধান্তকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি৷
বুধবার ওই মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, মামলাকারীর অভিযোগ, মেট্রো প্রকল্পের জন্য ৮২৭টি গাছ কাটা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোনও গাছ পুরোপুরি কেটে ফেলা হয়নি। অন্যত্র প্রতিস্থাপনের জন্য সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ৯৪টি গাছ অন্য জায়গায় লাগানোও হয়েছে। মেহতা সর্বোচ্চ আদালতের কাছে বলেন, ‘কলকাতা মেট্রোর পার্পল লাইনের কাজের জন্য নতুন করে আর গাছ কাটার প্রয়োজন নেই।’
সলিসিটার জেনারেল নতুন করে গাছ না কাটার আশ্বাস দিলেও সেই যুক্তি মানতে চাননি মামলাকারী। তাঁদের আইনজীবী জয়দীপ গুপ্ত বলেন, ‘রাজ্যের পরিবহণ পরিকাঠামোর উন্নয়নের স্বার্থে পরিবেশ ধ্বংস করা যেতে পারে না৷ গাছ কাটা বা গাছ স্থানান্তরের আগে বিশেষজ্ঞ কমিটির রায় নেওয়া হোক৷ মুম্বইয়ে মেট্রো নির্মাণের সময়ে গাছের ট্র্যান্সপ্লান্টেশন ব্যর্থ হয়েছে৷ দেখা গিয়েছে, ট্র্যান্সপ্লান্টের পরে গাছ বাঁচছে না৷ কলকাতায় একটি স্টেশন নির্মাণের জন্য ৯২৩টি গাছ কাটার কথা বলা হচ্ছে৷ এর মধ্যে অনেক পুরোনো ও বড় গাছগুলোও রয়েছে৷ এই সব গাছ কাটলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে৷’ আইনজীবী গুপ্তর আপত্তিকে মান্যতা দিয়েই বিচারপতি গভাই বলেন, ‘গাছ কাটা বা ট্র্যান্সপ্লান্টেশনের প্রয়োজন আছে কি না, এই পদক্ষেপ কতটা সফল হবে, তা আগে বিবেচনা করে দেখতে হবে৷’