• কাঁটাতারের ওপারে বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড কুলেপাড়া আবাসের সমীক্ষায় স্বয়ং ডিএম
    বর্তমান | ২৪ অক্টোবর ২০২৪
  • পলাশ পাত্র, কৃষ্ণনগর: সীমান্তে কাঁটাতার মানেই একাধিক সমস্যা। তাই আবাস যোজনার সমীক্ষায়  সখিসোনা মণ্ডল, আব্দুল রহমান বিশ্বাস, লিটন মণ্ডলদের সঙ্গে কথা বলতে কাঁটাতারের ওপারে কুলেপাড়ায় গেলেন জেলাশাসকের নেতৃত্বে একটি প্রশাসনিক দল। বুধবার জেলা প্রশাসনের এই ভূমিকায় খুশি কুলেপাড়ার এই উপভোক্তারা। সখিসোনাদের সবই রয়েছে—ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড প্রভৃতি। ওঁরা ভারতীয় নাগরিক। তারপরও কুলেপাড়ায় বসবাসকারী ৪৪টি পরিবারের প্রায় ২০০ মানুষকে অনেকটা খাঁচাবন্দি জীবন-যাপন করতে হয়। নেই পাকা ঘর। সকাল ৬টা থেকে অন্ধকার নামার আগেই গেট বন্ধ হয়ে যায়। তখন এপারে আসা বন্ধ হয়ে যায়। অসুস্থ বা জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে বিএসএফের অনুমতি সহ একাধিক বিধিনিষেধ পেরিয়ে এপারে আসতে হয়। এই প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে আবাসের সমীক্ষা করতে এদিন জেলাশাসক অরুণ প্রসাদ, অতিরিক্ত জেলাশাসক অনুপ দত্ত, সদর মহকুমাশাসক শারদ্বতী চৌধুরী, বিডিও সৌগত সাহা সহ একাধিক আধিকারিক কুলেপাড়ায় যান। 

    নদীয়া জেলার ১৮৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত সহ এই এলাকাতেও শুরু হয়েছে আবাসের সমীক্ষা। সরকারি কর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে সমীক্ষা করছেন। কারা আবাসের টাকা পাওয়ার যোগ্য তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। ২০২০-২১ সালে যাঁদের আবাস যোজনার তালিকায় নাম ছিল, যাঁরা পরে আবেদন করেছিলেন ও যাঁদের ঘর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে দেখছেন সরকারি আধিকারিকরা। উপভোক্তারা দু’পাতার ফর্মের মাধ্যমে ঘরের আবেদন  করছেন। এর আগে আবাস যোজনার ঘর নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। ঘর পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা নেওয়া, ঘর পাওয়ার উপযুক্ত নয় এমন ব্যাক্তিকে ঘর দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ ছিল। এরমধ্যেই কেন্দ্র সরকার আবাসের টাকা দেওয়া বন্ধ করে  দিয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজের উদ্যোগে রাজ্যের কোষাগার থেকে সেই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। 

    সেই মতো মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে সমীক্ষা। চলবে  ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমেই উপভোক্তাদের সমস্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চলে যাবে। সেখান থেকেই যোগ্য উপভোক্তাদের তালিকা দেওয়া হবে। তারপর টাকা দেওয়া শুরু হবে ।তিন ধাপে সেই টাকা দেওয়া হবে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে ৮ হাজার ৭০৫ জন উপভোক্তার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। গোটা জেলায় এই সংখ্যাটা ১ লক্ষ ৮১ হাজার। তালিকায় নাম থাকা উপভোক্তার বাড়িতে গিয়ে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের ২৯টি টিম তদন্ত করছে। এ নিয়ে 

    সখিসোনা মণ্ডল, আব্দুল রহমান বিশ্বাস, লিটন মণ্ডলরা খুব খুশি। তিন সন্তান নিয়ে মাটির ঘরে থাকেন দিনমজুর লিটন মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব খুশি। আমাদের ঘর দেওয়ার জন্য জেলাশাসক সার্ভে করতে এসেছেন। আমাদের যা জিজ্ঞাসা করেছেন বলেছি। খুব কষ্টে থাকি। ঘর পেলে ভালো ভাবে মাথা গোঁজার জায়গা পাব।’ বিডিও সৌগত কুমার সাহা বলেন, ‘ওই এলাকার মানুষজন ঘরের জন্য আবেদন করেছেন। ঘর দিয়ে জল পড়ে। মাটির ঘর। এদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। তাই সার্ভে করতে যাওয়া হয়েছিল।’ এদিন জেলাশাসক অরুণ প্রসাদ সার্ভে করার ফাঁকে বলেন, ‘কাজটি নিখুঁত ভাবে করা হচ্ছে। যিনি ঘর পাওয়ার যোগ্য তিনিই ঘর পাবেন।কোনও অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
  • Link to this news (বর্তমান)